কামরুজ্জামান মুকুল, বাগেরহাট
তীব্র জ্বর, বুকে ব্যথা ও মাথা যন্ত্রণাসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে গত রোববার বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন মাহমুদ শেখ (৪৫)। সদর উপজেলার বারাকপুর এলাকার বাসিন্দা মাহমুদ পেশায় একজন রিকশাচালক। বিভিন্ন পরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্রে তাকে ৫ ধরনের ওষুধ লিখে দেন চিকিৎসক। এরমধ্যে তিন ধরনের ওষুধ হাসপাতাল থেকেই পেয়েছেন। তবে বাকি দুই পাতা ওষুধ কিনতে শেষ তার জমানো দুই দিনের রোজগার। চারদিন আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু কন্যাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন কাড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা খন্দকার মাইনুল ইসলাম হিমু। তিনি বলেন, ৩০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে অন্তত তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি দেখে প্রথমেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। বাচ্চার জন্য যে ওষুধ প্রয়োজন তার বেশিরভাগই বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগেরহাটে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এলেও নামমাত্র কয়েকটি সাধারণ ওষুধ ছাড়া দামি ওষুধ মিলছে না। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বরাদ্দের তুলনায় চারগুণ চাহিদা থাকায় সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ড, গাইনি ওয়ার্ড, মেডিসিন ওয়ার্ডসহ প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে সাধারণ বেডের পাশাপাশি মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। পাশে বসে রয়েছেন স্বজনরা। কোনো কোনো ওয়ার্ডে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে আসছে। এছাড়া জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক রোগীর চাপ দেখা যায়। হাসপাতালে কথা হয় তানিয়া খাতুন নামে এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই জায়গা থেকে যে ওষুধ লিখে দিছে তা নেই। কিনতে হবে বাইরে থেকে। আমরা গরিব মানুষ, তিন বেলা ভাতই জোটে না ঠিকমতো। এখন কী করবো বুঝতেছি না।’ একটু দূরে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে কথা বলতে আসা মো. কাউসার মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ‘দূরদূরান্ত থেকে অনেক রোগী আসে এখানে। একটু খারাপ দেখলেই ডাক্তাররা খুলনা বা ঢাকায় রেফার্ড করেন। ঢাকা বা খুলনায় যদি যেতেই পারতাম তাহলে কি এখানে আসতাম।’ তবে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকারের দাবি এই মুহূর্তে হাসপাতালে ওষুধের খুব বেশি সংকট নেই। প্রয়োজনীয় সব ওষুধ রোগীকে দেওয়া হচ্ছে। তবে কিছু ওষুধ সরবরাহ না থাকায় দেওয়া যাচ্ছে না। সার্বিক বিষয়ে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে এই মুহূর্তে প্রায় সাড়ে চারশ রোগী ভর্তি। প্রতিদিন জরুরি বিভাগে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী এবং বহির্বিভাগে ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার রোগী আসে। বরাদ্দের চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা সংকট তৈরি হচ্ছে। তবে আমরা সাধ্যের সবটুকু দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সরকার বাজেট বৃদ্ধি করলে বেশিরভাগ ওষুধ হাসপাতাল থেকেই দেওয়া সম্ভব হবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেলে রেফার্ডের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে ১০ জন সিনিয়র কনসালটেন্ট পোস্টের বিপরীতে আছেন মাত্র ২ জন এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট ১২ জনের বিপরীতে আছেন ৩ জন। ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার মতো যদি জনবল না থাকে তাহলে একটু খারাপ অবস্থা হলে রেফার্ড করাটা স্বাভাবিক।

