১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

মোবাইলের নিরাপত্তায় ই-সিম নাকি সিম কার্ড?

প্রতিদিনের ডেস্ক
সম্প্রতি ভারতের তেলেঙ্গানার মানচেরিয়াল রাজ্যে একটি সাইবার প্রতারণার ঘটনায় মোবাইল সিম কার্ডের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের সতর্কতা দিয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।সম্প্রতি ভারতের তেলেঙ্গানার মানচেরিয়াল রাজ্যে একটি সাইবার প্রতারণার ঘটনায় মোবাইল সিম কার্ডের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের সতর্কতা দিয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। সরকারী কর্মকর্তা পরিচয়ে ভীতিপ্রদর্শনমূলক ফোন পান একজন ব্যক্তি। কর্তৃপক্ষকে জানালে ওই অভিযোগ থেকে শুরু হয় তদন্ত। এরপর জানা যায়, অবৈধ সিম কার্ড ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ফোন কলকে স্থানীয় নম্বরের ছদ্মবেশে চালানো হয়। এভাবে তারা আসল পরিচয় লুকিয়ে স্ক্যাম বা প্রতারণা করতে পারে। ঘটনাটি মোবাইল সিম কার্ডের নিরাপত্তা সমস্যা সামনে নিয়ে এসেছে। মোবাইলে মূলত ফিজিক্যাল সিম ও ই-সিম এ দুই ধরনের সিম ব্যবহার হয়। এ দুই ধরনের সিম কীভাবে কাজ করে এবং নিরাপত্তার দিক থেকে কোনটি বেশি ভালো, এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণ সিম কার্ড বা সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল হলো মোবাইলের একটি ছোট চিপ, যা মোবাইলকে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করে। এটি কল, মেসেজ ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সাহায্য করে। এ সিমের মধ্যে ইউনিক সাবস্ক্রাইবার আইডি, নিরাপত্তা তথ্য ও নেটওয়ার্কে প্রবেশের ডেটা থাকে।
অন্যদিকে ই-সিম বা এমবেডেড সিম হলো এমন একটি ডিজিটাল সিম, যা সরাসরি ফোন বা স্মার্টওয়াচের মধ্যে ইনবিল্ট থাকে। এটি আলাদা কোনো কার্ড ছাড়াই ডিজিটালি চালু করা যায়। যেকোনো সময় নতুন ক্যারিয়ার বা প্ল্যান যুক্ত করা সহজ হয়। বিশেষ করে যারা বিদেশ ভ্রমণ করেন, তাদের জন্য ই-সিম অনেক সুবিধাজনক।টেলিকম খাতের বিশেষজ্ঞ প্রিয়াংকা কুলকার্ণী জানান, সিমের কার্ডের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি। সিম হারানো, চুরি হওয়া বা ক্লোন করা যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা সিম সোয়াপ ফ্রড, যেখানে প্রতারকরা মোবাইল অপারেটরের কল সেন্টারে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে কারো নম্বর অন্য সিমে স্থানান্তর করে নিয়ে যায়। এতে পরিচয় চুরি ও আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
তবে ই-সিম সিকিউর হার্ডওয়্যারে সংরক্ষিত ও ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রটোকলের মাধ্যমে সুরক্ষিত। ই-সিম অ্যাক্টিভেশন বা পরিবর্তনের সময় মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন লাগে, যা প্রতারকদের জন্য অনেক কঠিন। তবে অপারেটরের যাচাই প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা থাকলে ঝুঁকি থেকে যায়।
সাইবারসিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ শুভম সিংহ জানান, ই-সিম সফটওয়্যার ও ক্লাউড ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় হ্যাকাররা দূর থেকে ই-সিম প্রফাইল নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে পারে। যদি কারো ই-মেইল বা ক্যারিয়ার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়, তবে অন্য ডিভাইসে ই-সিম চালু করা সম্ভব। তাই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, দুই ধাপের যাচাই (২এফএ) প্রয়োজনীয়।
ই-সিম ব্যবহার করলে সিম চুরি কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে গোপনীয়তা বাড়ে। কিন্তু একই সঙ্গে ক্যারিয়ার ও ডিভাইস নির্মাতারা আপনার ডেটা সংগ্রহ করতে পারে। ব্যবহারকারীদের উচিত প্রাইভেসি সেটিংস ঠিক করা এবং পাসকোড, বায়োমেট্রিক ও দূর থেকে ডিভাইস লক করার ব্যবস্থা রাখা।
ফিজিক্যাল সিম এখনো বেশি জনপ্রিয় ও সহজলভ্য হলেও নিরাপত্তার দিক থেকে ই-সিম অনেক ভালো বিকল্প। ডিজিটাল দুনিয়ায় যেভাবে মোবাইল নিরাপত্তা বাড়ছে, তাতে ই-সিম ভবিষ্যতের প্রযুক্তি হতে যাচ্ছে। তবে ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়