সুন্দর সাহা
যশোরের নওয়াপাড়ায় ব্যবসায়ী মহলে মুর্তিমান এক আতঙ্কের নাম আসাদুজ্জামান জনি। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থেকে একহাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে পাপের ঘড়া শেষ পর্যন্ত পূর্ণ হয়েছে এক ব্যবসায়ীকে বুক সমান মাটিতে পুতে ও কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের ঘটনায়। তার বিরুদ্ধে অপহরণ ও নির্যাতনের মাধ্যমে কাড়ি কাড়ি টাকা চাঁদায়ের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি অনুকলে বুঝে সেই ব্যবসায়ীর স্ত্রী ছুটে যান সেনা ক্যাম্পে। থানাতেও যান কিন্তু অভয়নগর থানার ওসি গুরুত্ব দেননি। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় ওসি ভোল পাল্টে বয়ান বদল করেন। অবশেষে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাতে খুলনায় যৌথবাহিনীর জালে ধরা পড়েছে জনি। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যদিও এখন পর্যন্ত তার অপকর্মের অন্যতম হোতা মফিজুর রয়েছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
পুলিশের দাবি-অভিযোগটি চাউর হওয়ার পর গা ঢাকা দেন আসাদুজ্জামান জনি। গত বছরের জুলাই মাসে নওয়াপাড়ার এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী আসমা খাতুন অভিযোগ করেন যে, তার স্বামীকে অপহরণ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। চাঁদা না দিলে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এরপর তাকে বালুতে বুক পর্যন্ত পুঁতে রেখে কয়েক দফায় ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এ ঘটনায় আসাদুজ্জামান জনিসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। পরে চলতি বছরের ৩ আগস্ট আসাদুজ্জামান জনিসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘদিন প্রচেষ্টার পর ১৪ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) ভোরে র্যাব, ডিবি, সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান পরিচালনা করে খুলনার সোনাডাঙা এলাকার হোটেল রোজ গার্ডেন-২ থেকে তাদের আটক করা হয়। আটক জনি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সংগঠনের নিয়ম শৃঙ্খলা ভংগের দায়ে ইতি পূর্বেই তার পদ স্থগিত করা হয়। ঘাট গোডাউন দখল চাঁদাবাজি, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ সহ আলোচিত কৃষকদল নেতা তরিকুল হত্যায় তার সম্পৃক্ততা আছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও কণা ইকো পার্ক তৈরির সময় তার রাজনৈতিক ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে নাম মাত্র টাকা দিয়ে সংখ্যালঘুদের জমি জোর পূর্বক দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ১৪ আগষ্ট সকাল ৭ টায় খুলনার মহানগরের হোটেল রোজ গার্ডেন-২ আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটক আসাদুজ্জামান জনি নওয়াপাড়া বাজার গুড়হাটা এলাকার কামরুজ্জামান মজুমদারের পুত্র। সাবেক ইউপি সদস্য তুহিন চলিশিয়া ইউনিয়নের ৫ নং কোটা গ্রামের মাহমুদ শেখের পুত্র। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথবাহিনীর একটি দল মঙ্গলবার রাতে খুলনায় অভিযান চালিয়ে জনিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। তাকে বর্তমানে অভয়নগর থানা হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার বিরুদ্ধে আরও কিছু মাদক ও চাঁদাবাজির অভিযোগ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে জনির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই মামলার ভিত্তিতেই যৌথবাহিনীর অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও পুলিশের ওপর ভরসা নেই ব্যবসায়ীদের। ভুক্তভোগীদের অনেকে বলছেন-সেনাবাহিনীর তৎপরতা থাকলে বাকিরাও দ্রুত গ্রেফতার হতে পারে। উল্লেখ্য, আসাদুজ্জামান জনির বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর পদ স্থগিত করা হয়েছিল। তিনি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

