দেশ ও জাতি এগিয়ে চলেছে নির্বাচনের দিকে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত পত্র দেওয়ার পর থেকেই আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে ইসি। দলগুলো প্রার্থী বাছাই করছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নির্বাচন এ দেশে উৎসবের শামিল। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যেও বাড়ছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। এদিকে ইসি আশা করছে, তারা আগামী সপ্তাহে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করতে পারবে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এমন তথ্য দেন। রোডম্যাপে সাধারণত নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো কোনটি কবে নাগাদ শেষ করা হবে, কবে নাগাদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে তার সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকে। রোডম্যাপ ঘোষিত হলে দেশব্যাপী নির্বাচনী আয়োজনও নতুন মাত্রা পায়। ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নারী নেত্রী ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন নিয়ে আগামী মাসের শেষ দিকে ইসি সংলাপ শুরু করতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধ অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইসি দ্রুত নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানা যায়, নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর রোজা শুরুর আগেই যাতে ফলাফল ও গেজেট প্রকাশ করা যায় এবং নির্বাচিতদের শপথগ্রহণের মতো সময় রাখা যায়, ইসি সেভাবেই ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করতে চায়। নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে চললেও কিছু দল ও গোষ্ঠী নির্বাচনের পথে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে চাইছে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তোলা হচ্ছে। আবার সমীক্ষা, জরিপ, গবেষণা ইত্যাদির নামে এমন সব বক্তব্য আসছে, যাকে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। ফলে নির্বাচনের পথে কিছু অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, যারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে, তারা জাতীয় রাজনীতি থেকে মাইনাস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, কারা নির্বাচনকে বিলম্বিত ও অনিশ্চিত করতে চায়, তাদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচিত হয়ে গেছে।নির্বাচনের পথে এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ গণ-অভ্যুত্থানের সময় লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র। যৌথ বাহিনীর অভিযানে এসব অস্ত্রের একটি বড় অংশ উদ্ধার করা গেলেও এখনো এক হাজার তিন শর বেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং আড়াই লাখের বেশি গোলাবারুদ উদ্ধার হয়নি। এমনিতেও দেশে অনেক অবৈধ অস্ত্র আছে। তদুপরি সীমান্ত দিয়ে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র দেশে প্রবেশ করার তথ্য রয়েছে। নির্বাচনের আগে এসব অস্ত্র মারাত্মক হুমকি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। দেশের অর্থনীতির বর্তমান বিপর্যস্ত অবস্থায় নির্বাচিত সরকার ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। এ অবস্থায় নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার পরিণতি হবে আত্মঘাতী। আমরা চাই, নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

