অর্থনীতির দুরবস্থা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না, উল্টো শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছে।মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও গতি নেই। অনেক পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আছে ডলার সংকট, ঋণের উচ্চ সুদহার।সব মিলে কৃষি, শিল্প ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতের উপকরণ আমদানি অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, সিমেন্ট, ক্লিংকার, বিটুমিন ইত্যাদি পণ্য আমদানিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। এতে এসব খাতের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।উৎপাদন খাতে স্থবিরতার কারণে সরকারও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পাচ্ছে না।
বাড়ছে সরকারের ঋণনির্ভরতা। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক অর্থবছরে ডিজেলের আমদানি কমেছে ২০ শতাংশ। আর ফার্নেস অয়েলের কমেছে ১০ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব উপকরণই উৎপাদন খাতের মূল উপকরণ। এসব উপকরণ আমদানি কমার অর্থই হচ্ছে উৎপাদন কমছে, অর্থনীতির গতি শ্লথ হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতির প্রাণ জ্বালানি তেল, বিশেষ করে ডিজেল। এ উপকরণটি কৃষি খাতের পাশাপাশি শিল্প ও পরিবহন খাতে ব্যবহৃত হয়। এর আমদানি কমে যাওয়া মানে অর্থনীতিতে এর চাহিদা কমে যাওয়া। আর চাহিদা কমে গেলে কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন ব্যাহত হয়। তথ্য-উপাত্ত বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে হাই স্পিড ডিজেল আমদানি হয়েছে ২৮ লাখ ৮১ হাজার ৯৯৮ টন। এর আগের অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ১৮১ মেট্রিক টন। সিমেন্ট ক্লিংকার, বিটুমিন ও পাথর আমদানিও আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছে। তথ্য বলছে, ক্লিংকার আমদানি কমেছে এক লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। বিটুমিন আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে চার লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন কম। শতকরা হিসাবে ২২ শতাংশ। পাথর আমদানিও কমেছে ১৬ শতাংশ। পাথর কম এসেছে ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন।
এসব উপকরণ কম আসার অর্থ হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে উৎপাদন কমে যাওয়া। এসব উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে শ্রমশক্তি জড়িত তাদের কর্মসংস্থান কমে যাওয়া। আর তা দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিই কমিয়ে দিচ্ছে। এসবের সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয়ও জড়িত। আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজস্ব কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রাজস্ব ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৯২ হাজার কোটি টাকা। শুধু আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক আদায়ের লক্ষ্য ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে শুল্ক আদায় হয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। অর্থসংকটে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে অর্থনীতিতে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় জনকল্যাণে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কম হওয়ার অর্থ হচ্ছে জনকল্যাণ ব্যাহত হওয়া এবং উন্নয়নে পিছিয়ে যাওয়া।
আমরা আশা করি, দেশে শিল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগে গতি আনার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। সব কিছু ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেলে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

