গ্যাসসংকটের কারণে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পসহ বস্ত্র খাতের কারখানাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংকট রয়েছে অন্যান্য শিল্পেও। ফলে কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। প্রায় বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে শ্রমিক-কর্মচারীদের।অন্যান্য খরচও অপরিবর্তিত থাকছে। ফলে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা।
গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে তৈরি পোশাক শিল্পসহ বস্ত্র খাতের দুরবস্থার চিত্রই উঠে এসেছে।পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস সরবরাহের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট গ্যাসের চাহিদা চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। অথচ গত শুক্রবার দেশে মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৮৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি ছিল এক হাজার ৩৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। শিল্প-কারখানার মালিকরা বলছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই গ্যাসের চাপ থাকে না।এমনিতেই বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে। তার ওপর এভাবে গ্যাসসংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হলে তাঁদের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন হবে।সাভারের পাকিজা গ্রুপের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আল মোস্তাকিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য জায়গার মতো আমাদের কারখানায়ও গ্যাসসংকট দেখা দেওয়ায় সময়মতো উৎপাদন কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। শ্রমিকরা বেকার বসে থাকে। আমাদের কারখানায় গ্যাসের প্রেসার প্রয়োজন ১২ থেকে ১৫ পিএসআই।
সেখানে আমরা দিনের বেলায় ২-৩ পিএসআই আর রাতের বেলায় ৫ পিএসআই গ্যাস পাচ্ছি।’
গত বুধবার সচিবালয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পোশাকশিল্পে চলমান গ্যাসসংকট নিরসন ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। এগুলো হচ্ছে—গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমঘন পোশাক ও বস্ত্র শিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিতাস গ্যাসের নতুন সংযোগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কর্তৃক যাচাই-বাছাই দ্রুত শেষ করতে হবে, যাতে কারখানাগুলো সময়মতো উৎপাদন শুরু করতে পারে। লোড বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই, শুধু সরঞ্জাম পরিবর্তন, পরিমার্জন বা স্থানান্তরের জন্য আবেদনকারীদের একটি আলাদা তালিকা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হবে। কম লোড বৃদ্ধির আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া, যা ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোকে দ্রুত উৎপাদনে যেতে সাহায্য করবে। সাভারের ধামরাই ও মানিকগঞ্জের মতো যেসব এলাকার গ্যাস পাইপলাইনের শেষ প্রান্তের কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যায়, সেখানে অন্তত ৩-৪ পিএসআই চাপ নিশ্চিত করতে হবে। সচিব প্রস্তাবগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা বাড়ছে। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ জরুরি। আর সে ক্ষেত্রে একটি প্রধান শর্ত হলো গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা। আমরা আশা করি, সরকার জরুরি ভিত্তিতে শিল্প-কারখানায় পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেবে।

