১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অন্যতম সংবেদনশীল ক্ষেত্র হলো সীমান্ত। প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্তে নানা সময়ে হতাহত, চোরাচালান ও অনুপ্রবেশের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলন দুই দেশের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে সীমান্ত হত্যাসহ নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে যে ঐকমত্য হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অগ্রগতি। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই দেশের শীর্ষ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধানরা ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন, যা আপাতদৃষ্টিতে একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে হচ্ছে। তবে এই ঐকমত্য কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে মাঠ পর্যায়ে এর বাস্তবায়নের ওপর।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিরীহ নাগরিকদের হত্যার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। সম্মেলনে বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি পুনরায় জোরালোভাবে উত্থাপিত হয় এবং বিএসএফও সতর্কতা বাড়ানো ও হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি করে হত্যা ও আহত করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক দালজিৎ সিং চৌধুরী সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতা ও টহল বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তবে অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এমন প্রতিশ্রুতি সব সময় বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এবার প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপ দেখতে জনগণ আগ্রহী।
সীমান্তে প্রাণহানি সত্যি শূন্যে নামানো গেলে তা হবে দুই দেশের আস্থার সম্পর্ক জোরদারের অন্যতম সোপান।
মাদক, অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মানব পাচার রোধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্তও প্রশংসনীয়। সীমান্ত অপরাধ দমনে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দুই দেশের জন্যই লাভজনক। তবে অনুপ্রবেশের বিষয়ে দুই পক্ষের অবস্থান এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। বিএসএফ মহাপরিচালক ‘পুশ ইন’ করার অভিযোগের জবাবে বলেছেন যে তাঁরা নিয়ম মেনে অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন।তবে ধর্মীয় বা ভাষাগত কারণে পুশ ইন করা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো উত্তর না আসাটা উদ্বেগজনক।
সম্মেলনে নেওয়া অন্যান্য সিদ্ধান্ত; যেমন—সীমান্তে সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প, তিনবিঘা করিডরে অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী দমনে জিরো টলারেন্স নীতি—সবকিছুই ইতিবাচক। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলে, কাগজে-কলমে নেওয়া এই সিদ্ধান্তগুলো প্রায়ই মাঠ পর্যায়ে কার্যকর হয় না। সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে উভয় পক্ষকে তাদের প্রতিশ্রুতি কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
অতএব এই সম্মেলন কেবল আনুষ্ঠানিক আলোচনা নয়, বরং বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরির একটি সুযোগ। সীমান্ত শান্তিপূর্ণ হলে চোরাচালান কমবে, প্রাণহানি ঠেকবে এবং পারস্পরিক আস্থা বাড়বে। দুই দেশের জনগণও সঠিক অর্থে সহযোগিতার সুফল ভোগ করতে পারবে। এখন দায়িত্ব উভয় বাহিনীর—তারা যেন প্রতিশ্রুতিগুলো মাঠ পর্যায়ে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করে সীমান্তকে সত্যিকার অর্থেই শান্তি ও বন্ধুত্বের সীমানায় পরিণত করে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়