আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি। আগের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারা মানুষ তাকিয়ে আছে সামনের নির্বাচনের দিকে। তারা আশা করছে, সামনের এই নির্বাচনটি তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করবে। কিন্তু তার জন্য যে ধরনের পরিস্থিতি থাকা প্রয়োজন সেই পরিস্থিতি কি আছে—এমন প্রশ্ন অনেকেই করছেন।
সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও প্রচেষ্টা ঘাটতি আছে বলেই মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডসহ যেভাবে খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে তাতে মানুষ রীতিমতো আতঙ্কিত। ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, চাঁদাবাজি বেড়েছে।
অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের সময় জেলখানা, থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি থেকে যেসব আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি লুট হয়েছে তার একটি বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে মব সন্ত্রাসের যেসব ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যথার্থই বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।সোমবার সকালে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি আরো বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করছে এবং করে যাবে।
সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ১৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার মধ্যে আছে, বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে যেসব প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বাদ দিয়ে এবার নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া, বিশৃঙ্খলা (মব) সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গ্রুপকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আবারও বলেছেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। সোমবার রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এই আশ্বাস ব্যক্ত করেন।
দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশিরাও চায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যেন অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার সত্যিকারের প্রতিফলন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।আমরা চাই, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আশা করি, এই নির্বাচন হবে বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।

