২৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

এক যুগ ভোগান্তির পর চুক্তি বাতিল, নতুন ঠিকাদার খুঁজছে কেডিএ

খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) নগরবাসীর ভোগান্তি কমানোর জন্য এক যুগ আগে শিপইয়ার্ড সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা এবং ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সেই কাজ এখনো শেষ হয়নি। দফায় দফায় বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়। দ্রুত কাজ শেষ করার দাবিতে বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন করলেও ফল মেলেনি। এ অবস্থায় কাজে গাফিলতি, ধীরগতি ও শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্সের সঙ্গে চুক্তি বাতিল এবং নতুন ঠিকাদারের খোঁজে দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কেডিএ। সংস্থার গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইজাদুর রহমান চুক্তি বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা নগরের রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে শিপইয়ার্ডের সামনে দিয়ে খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নে কেডিএর প্রকল্প অনুমোদন পায় ২০১৩ সালের ৭ মে। মেয়াদকাল ধরা হয় ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। পরে তা তিন দফায় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তবে ২০২০ সালের ২১ জুলাই ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প আবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন হলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় ছিল ৩ দশমিক ৭৭৮ কিলোমিটার চার লেন সড়ক, দুই পাশে নতুন ড্রেন ও ড্রেনের ওপর প্রশস্ত ফুটপাত এবং সড়কের মাঝখানে শূন্য দশমিক ৯২ মিটার সড়ক বিভাজক নির্মাণ। মূল রাস্তা, বিভাজক, ড্রেন ও ফুটপাত মিলিয়ে সড়কটি ৬০ ফুট চওড়া হবে। পাশাপাশি নির্মাণ করা হবে ৪৮ মিটারের একটি সেতু, একটি স্লুইসগেট ও একটি কালভার্ট। এ ছাড়া রাস্তাটি আগের চেয়ে প্রায় তিন ফুট উঁচু হবে। দুটি মনুমেন্ট স্থাপন এবং ৪২০টি বৃক্ষরোপণ করা হবে। কেডিএর গণসংযোগ বিভাগ থেকে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় জমির মালিকানা থাকা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান-খুলনা শিপইয়ার্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ও বাংলাদেশ অক্সিজেন কোম্পানির ছাড়পত্র পেতে বিলম্ব, মামলা এবং এলাকাবাসীর আন্দোলনের কারণে অধিগ্রহণ বিলম্ব হয়। শেষে অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজ পায় ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান লিমিটেড এবং মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড (জয়েন্ট ভেঞ্চার)। তবে কাজে গাফিলতি ও বিলম্ব এবং কর্মপরিকল্পনা মোতাবেক কাজ না করায় ঠিকাদারকে বিভিন্ন সময়ে মোট ১৪টি ওয়ার্নিং লেটার দেওয়া হয়। পরে এসব কারণে জনভোগান্তি এবং চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে জনস্বার্থে ঠিকাদারের চুক্তি চলতি বছরের ৭ আগস্ট বাতিল করা হয়। এরপর নতুন ঠিকাদার চেয়ে ২৪ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং তা ২২ সেপ্টেম্বর খোলা হবে। এ নিয়ে কথা হলে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, শিপইয়ার্ড সড়কটি খুলনার অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। প্রায় চার কিলোমিটার সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ১২ বছরেও সংস্কার না হওয়ায় ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে প্রতি দিন হাজারো মানুষ চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্সের গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে সড়কের কাজ শেষ হয়নি। তাদের লুটপাতের কারণে যেটুকু কাজ সম্পন্ন হয়েছে তাও নিম্নমানের। প্রকল্পে এত ধীরগতি ও ব্যর্থতার পরও ঠিকাদারকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার দায় কেডিএ ও ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান এড়াতে পারে না। সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সড়কের কাজ অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন না হলে খুলনার সাধারণ মানুষ কঠোর আন্দোলনে নামবে। কেডিএর ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এত বড় রাস্তার কাজ কেডিএকে দেওয়া উচিত হয়নি। কেডিএতে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই, নেই কোনো জবাবদিহি। এখানে সব কাজই ঘুরে। কেউ মুখ খুলতে চান না, কেউ সমস্যা সমাধানের কথা ভাবেন না। যোগাযোগ করা হলে কেডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্ত) ও শিপইয়ার্ড সড়ক সংস্কার প্রকল্পের পরিচালক মো. আরমান হোসেন বলেন, মাহাবুব ব্রাদার্সের সঙ্গে চুক্তি বাতিল এবং নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই কাজ শুরু করার চেষ্টা করছি।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়