১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

বাগেরহাটে ৪টি আসন বহালের দাবিতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত : মোংলা বন্দর অচল

কামরুজ্জামান মুকুল/এনামুল কবির/ আবুল বাশার লিটু, বাগেরহাট
বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচন কমিশন একটি আসন কমানোসহ আসনগুলোর সীমানা সম্পূর্ণ পাল্টে দেওয়ার প্রতিবাদে সোমবার জেলাব্যাপী পালিত হয়েছে হরতাল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি। বিএনপি, জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির আহ্বানে এই হরতাল চলাকালে দিনভর বাগেরহাট থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীসহ ৪৮টি দূরপাল্লার রুট ‎ও আন্তঃজেলা রুটে সব ধরনের যানবাহন চলাচলসহ সড়ক পথে মোংলা বন্দরের মালামালা আনা-নেয়ার কাজও বন্ধ থাকে। জেলার সব উপজেলা সদর ও পৌর শহরগুলোতেও সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ক্ষুব্ধ জনতা সকালে হরতাল চলাকালে জেলা, উপজেলার নির্বাচন অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে কোনো সরকারি কর্মকর্তা অফিসে ঢুকতে পারেনি। হরতাল চলাকালে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ স্কুল কলেজ, ব্যাংক বীমা ও সরকারি অফিসের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। হরতাল ও সড়ক অবরোধে মোরেলগঞ্জে পানগুছি ও মোংলা নদীতে সড়ক বিভাগের ফেরি চলাচলও বন্ধ থাকে। সড়ক-মহাসড়ক বন্ধ থাকায় মোংলা বন্দরসহ বাগেরহাট জেলা দিনভর সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সড়ক মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন দূরপাল্লার রুট ‎ও আন্তঃজেলা রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। হরতাল চলাকালে জেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে, একই দাবিতে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) জেলা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল এবং বুধবার ও বৃহস্পতিবার (১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর) আবারও জেলাজুড়ে একটানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতারা। হরতাল চলাকালে শহরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, দশানী মোড়, খান জাহান আলী (রহ.) মাজার মোড়, মুনিগঞ্জ সেতু ও দড়াটানা সেতু টোল প্লাজা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নির্বাচন অফিস ও জজ আদালতসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সকাল থেকে পিকেটিংয়ে তৎপর ছিলেন বিএনপির সাবেক এমপি শেখ মুজিবর রহমান, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ কামরুল ইসলাম গোরা, খাদেম নিয়ামুন নাসির আলাপ, ব্যারিস্টার শেখ জাকির হোসেন, অহিদুল ইসলাম পল্টু, খান মনিরুল ইসলাম, ফকির তারিকুল ইসলাম, সৈয়দ নাসির আহমেদ মালেক, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রেজাউল করিম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির সদস্য সচিব শেখ মুহাম্মদ ইউনুস, জেলা জামায়াত নেতা এস এম মঞ্জুরুল হক রাহাতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, বা জনগণের দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন অন্যায়ভাবে বাগেরহাটের সংসদীয় আসন কমানোসহ আসনগুলোর সীমানা সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। ইসি তাদের গেজেট পরিবর্তন না করা পর্যন্ত মোংলা বন্দর অচল করে দিয়ে আরও কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, ইসি বাগেরহাটের মানুষকে অবমূল্যায়ন করে জেলার একটি সংসদীয় আসন কমিয়েছে। তাদের এই চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আরও কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কারিগরি কমিটি খসড়া প্রস্তাবে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটি রাখার প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলো নির্বাচন কমিশনের শুনানিতেও অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তাদের দাবিকে উপেক্ষা করে গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত গেজেট বাগেরহাটে একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন রাখাসহ নিজেদের খসড়া প্রস্তাবে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে আসনের সীমানা নির্ধারণ করে। ইসির এই সিদ্ধান্তে আবারও ফুঁসে ওঠে বাগেরহাটের রাজনৈতিক দলসহ আমজনতা।

 

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়