২৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

ব্রাজিলে অভ্যুত্থানের চক্রান্তের দায়ে সাবেক প্রেসিডেন্টের ২৭ বছর কারাদণ্ড

প্রতিদিনের ডেস্ক:
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে ২৭ বছর তিন মাস কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতায় থাকার জন্য অভ্যুত্থানের চক্রান্ত করার দায়ে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি কারমেন লুসিয়া বলেছেন, বলসোনোরার বিরুদ্ধে ব্রাজিলের গণতন্ত্র দুর্বল করার উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ নেওয়া যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।বর্তমানে গৃহবন্দি আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি তৈরির দায়ে দেশটির ইতিহাসে প্রথম কোনও সাবেক প্রেসিডেন্টকে দণ্ড প্রদান করা হলো। তাই চরম ডানপন্থি ও জনতুষ্টিবাদী ৭০ বছর বয়সী এই নেতার বিরুদ্ধে আদালতের রায় বড় রকমের একটি ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।ব্রাজিলের সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ বিচারপতির এক প্যানেল ওই সাজার রায় দিয়েছে। তবে রায়টি সর্বসম্মত ছিল না। বুধবার বিচারপতি লুইজ ফুক্স ভিন্নমত পোষণ করে বলসোনারোকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন এবং আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অবশ্য বাকি চার বিচারপতি ভিন্ন পাঁচটি অপরাধে বলসোনারোকে দোষী সাব্যস্ত করেন—সশস্ত্র অপরাধী সংগঠনে অংশগ্রহণ, সহিংসভাবে গণতন্ত্র বিলোপের চেষ্টা, অভ্যুত্থান সংগঠিত করা এবং সরকারি সম্পত্তি ও সুরক্ষিত সাংস্কৃতিক সম্পদের ক্ষতি সাধন।বিচারপতি ফুক্সের ওই একক ভোটে আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ পেতে পারেন বলসোনারো। তার আইনজীবীরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ওই দণ্ড অর্থহীন বাড়াবাড়ি হয়েছে। শিগগিরই এর বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করা হলে মামলা পুরোপুরি নিষ্পত্তি হতে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসতে পারে। ২০২৬ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য ঘোষিত হলেও বলসোনারো বারবার বলেছেন, তিনি ওই নির্বাচনে প্রার্থী হবেন।চলতি বছর বিশ্বে একাধিক ডানপন্থি নেতার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চলতে দেখা গেছে। ফ্রান্সের মেরিন লে পেন ও ফিলিপাইনের রদ্রিগো দুতের্তের মতো আরও কয়েকজন ডানপন্থি নেতার পর তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলেন বলসোনারো।বলসোনারোর বিরুদ্ধে আদালতের অবস্থানের নিন্দা জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সাবেক ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই ওই মামলাকে ‘ডাইনি নিধনের’ সঙ্গে তুলনা করে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে বেশকিছু প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এরমধ্যে ছিল, শুল্ক বৃদ্ধি করা, প্রধান বিচারপতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি এবং উচ্চ আদালতের অধিকাংশ বিচারকের ভিসা বাতিল করা।কারাদণ্ডের বিষয়ে বৃহস্পতিবার প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, সাজার রায়ের বিষয়টি ছিল খুবই খারাপ। এটি ব্রাজিলের জন্য খুবই বাজে হলো বলে আমি মনে করি।যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ব্রাজিলের কংগ্রেসম্যান ও বলসোনারোর ছেলে এদুয়ার্দো বলসোনারো বলেন, ব্রাজিল এবং এর উচ্চ আদালতের বিচারকদের ওপর ট্রাম্প আরও নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করবেন বলে আশা করছেন তিনি।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, ব্রাজিলের আদালত অন্যায়ভাবে রায় দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই ‘ডাইনি নিধনের’ উপযুক্ত জবাব দেবে।রুবিওর বক্তব্যকে হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রেকর্ডে থাকা তথ্য প্রমাণকে অগ্রাহ্য করে ব্রাজিলের কর্তৃত্বের ওপর হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ব্রাজিলের গণতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় পায় না।দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা বলেছেন, তিনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার থোড়াই পরোয়া করেন।

Previous article
কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী করতে রাজি নেপালের রাষ্ট্রপতি, পার্লামেন্ট ভাঙতে আপত্তি প্রতিদিনের ডেস্ক: ‘জেন জি’ আন্দোলনকারীদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে নেপালের অন্তবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নেপাল নিউজ তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, শীতলনিবাসে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার পর, তিনি এ পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত হলেও সংসদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করেছেন, কারণ তিনি একটি সাংবিধানিক সংকটের আশঙ্কা করছেন।নেপাল নিউজ জানায়, পৌডেল ও কার্কি সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন। কার্কী যুক্তি দেখিয়েছেন যে, সংসদ ভেঙে না দিলে একজন সংসদ সদস্য নন এমন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না, অন্যদিকে পাউদেল তাকে সংসদ ভাঙা ছাড়া নিয়োগের বিকল্প উপায় খুঁজছেন। রাতভর আলোচনায় কোনো সমাধান হয়নি এবং শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে আরও পরামর্শ নেওয়া হবে। বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন এমন একজন আইনজীবীকে উদ্ধৃত করে নেপাল নিউজ লিখেছে, “আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন সংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ ভীমার্জুন আচার্য, বিপিন আধিকারী, পূর্ণমান শাক্য, চন্দ্রকান্ত গ্যাওয়ালি, সূর্য ধুঙ্গেল ও ললিত বাহাদুর বসনেত।–৯ সেপ্টেম্বরের জেন-জি বিক্ষোভে ৩০-এর বেশি নিহত এবং এক হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা সংসদ ভাঙা এবং সুশিলা কার্কীর নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলেন, দলীয় নেতাদের প্রত্যাখ্যান করে।এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট পাউদেল একজন স্বাধীন ব্যক্তিকে নিয়োগের কথা ভাবছেন, তবে সংবিধানগত জটিলতা এখনও রয়ে গেছে। আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল আর্টিকেল ৬১(৪) এবং ৩০৫।আর্টিকেল ৬১(৪) প্রেসিডেন্টকে সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব দেয়, আর আর্টিকেল ৩০৫ কেবিনেটের সুপারিশে সাময়িক আদেশ জারি করার সুযোগ প্রদান করে, যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি এখন প্রযোজ্য নয়।বিক্ষোভ চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করলে সংকট আরও গভীর হয়। তারপর থেকে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেপাল সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে, অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে।নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি কার্কি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানের জন্য সুপরিচিত ছিলেন তিনি।কৃষক পরিবারের সন্তান কার্কি ৭ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়, তার পরিবারের সঙ্গে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিপি কৈরালার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। কৈরালা ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত নেপালের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।১৯৭২ সালে মাহেন্দ্র মোরং ক্যাম্পাস থেকে বিএ পাস করা কার্কি ১৯৭৫ সালে ভারতের বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিকাল সায়েন্সে এমএ শেষ করেন। পরে তিনি ১৯৭৮ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি নেন।তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালে সেসময়কার তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী জয়প্রকাশ প্রসাদ গুপ্ত দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষের প্রভাবশালী এক প্রধান অপসারিত হওয়ার পর ‘পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেওয়ার অভিযোগে’ সেসময় ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওয়িস্ট সেন্টার) তাকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এ কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বরখাস্তও ছিলেন তিনি।
Next article

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়