শেখ জলিল আহমেদ, তালা
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় পাখিমারা বিলে বাস্তবায়িত জোয়ার-ধারা তথা টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) কার্যক্রমের বকেয়া ক্ষতিপূরণের ৪৮ কোটি টাকা প্রাপ্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জমির মালিকরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় স্থানীয় আব্দুস সালাম গণগ্রন্থাগার হল রুমে পাখিমারা টিআরএম বিল কমিটি কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের পক্ষে তালার শ্রীমন্তকাটি গ্রামের গোলদার আশরাফুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, তালার কপোতাক্ষ অববাহিকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম তথা জোয়ারাধারা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকাকে জলাবদ্ধ মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কিš ব্যাপক ভোগান্তি হয়েছে পাখিমারা বিল অধিবাসীদের। বিগত ২০১১-১২ অর্থবছরে টিআরএম কার্যক্রমের আওতায় পাখিমারা বিলের চারিধারে পেরিফেরিয়াল বাঁধ নির্মাণ এবং বিলের সাথে জোয়ারভাটা যুক্ত করার জন্য সংযোগ খাল খনন করা হয়। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৬ বছর এ বিলের ১৫৬২ একর জমিতে জোয়ারভাটা কার্যক্রম চালু রাখা হয়। বিলে জোয়ারভাটা চালু রাখার মেয়াদ পর্যন্ত জমির মালিকদের ফসলের ক্ষতিপূরণ প্রদানে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিলে ৬ বছর টিআরএম বাস্তবায়িত হয়েছে। কিš জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে মাত্র ২ বছরের। অনুমোদিত অর্থ এবং ৪ বছর বরাদ্দ না পাওয়া মিলিয়ে সরকারের কাছে জনগণের পাওনার পরিমাণ প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। তিনি বলেন, “কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার অধিকাংশ এলাকা দীর্ঘদিন যাবত ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত ছিল। প্লাবিত হতো ফসলী জমি, মৎস্য ঘের, বসতি এলাকা, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট সহ বিভিন্ন সেক্টর। এলাকা থেকে ভুক্তভোগী মানুষ স্থায়ী অস্থায়ীভাবে চলে যেতো অন্য জায়গায়। মানুষের সীমাহীন এই দুঃখ কষ্টের কথা বিবেচনা করে আমরা পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছিলাম। টিআরএম বাস্তবায়ন দ্বারা কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ১৫ লাখ অধিবাসী প্রত্যক্ষভাবে এবং প্রায় ৪০ লাখ অধিবাসী পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। এলাকার নদী তার জীবন ফিরে পেয়েছে এবং জীববৈচিত্রের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমরা পাখিমারা বিল অধিবাসীরা সীমাহীন দুঃখ-কষ্টের মধ্যে পড়েছি। ৬ বছর যাবৎ এলাকার জনগণ ফসল উৎপাদন করতে পারেনি। এলাকায় কর্মসংস্থানের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। অর্থাভাবে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ ঋণগ্রস্ত হয়ে অভাব অনটনের মধ্যে অর্ধাহার-অনাহারে জীবন অতিবাহিত করছে। সরকারের নিকট থেকে বকেয়া ক্ষতিপূরণ পাওয়া গেলে এলাকার মানুষ এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।” ভুক্তভোগীরা আরো জানান, বকেয়া ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দাবিতে ইতিপূর্বে পাখিমারা বিল অধিবাসীরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু এ বিষয় এখনো কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। এ সময় তারা সরকারের নিকট থেকে যাতে বকেয়া ক্ষতিপূরণের অর্থ দ্রুত পেতে পারে এবং নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য বিভিন্ন এলাকায় টিআরএম ব্যবস্থা আবার চালু হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

