১০ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

বেনাপোলে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ভারতীয় কাভার্ডভ্যান আটক পলাতক ড্রাইভার-হেলপার : কাস্টমসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

সুন্দর সাহা
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করা হলেও সেটি নিয়ে কাস্টমস কর্তাদের যেন কোন মাথাব্যাথা নেই। দেড় দিন পেরিয়ে গেলেও আটককৃত কাভার্ডভানে কি আছে সেটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দেখেননি। কাস্টমসের রহস্যজনক এই ভূমিকার কারণে বেনাপোল বন্দরে ব্যবসায়ীদের মাঝে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার সময় ভারতীয় কাভার্ডভ্যান (এইচ আর ৩৮ ইউ ২৪৮২) বেনাপোল স্থল বন্দরের কার্গো ইয়ার্ডে প্রবেশ করে। এরপর স্কেল হয়ে কার্গো ইয়ার্ডের মধ্যে এসে গাড়িটির হেলপার এবং চালক দ্রুত নিজে দেশে চলে যায়। এরপর গাড়িটি বন্দরের দায়িত্বে থাকা বেসরকারী সংস্থা পিমার নিরাপত্তা কর্মীরা পাহারা দিচ্ছে। কার্গো ভেহিকেল মাঠে গিয়ে দেখা যায় আটকের পর থেকে ভারতীয় কাভার্ডভ্যানটি বেসরকারী সংস্থা বন্দরের নিরাপত্তা সদস্যরা পাহারা দিচ্ছে। এই গাড়িটিকে বা কারা আটক করেছে জানতে চাইলে তারা বলে আমাদের স্যার গাড়িটি পাহারা দিতে বলেছে। কে গাড়িটি আটক করেছে এবং এই গাড়িতে কাদের মালামাল রয়েছে আমরা জানি না। শুনেছি গাড়ির চালক ও হেলপার গাড়ি রেখে ইন্ডিয়ায় পালিয়ে গেছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান আটকের পর বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তা, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন গোয়েšদা সংস্থার প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু অদৃশ্য কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কাভার্ড ভ্যানে কি পণ্য আছে সেটি দেখেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাস্টমসের একটি সূত্র জানায়, পণ্য চালানটি ছাড় করার দায়িত্বে আব্দুল লতিফের মালিকানাধীন রাতুল ইন্টারন্যাশনাল। তবে এই পণ্য চালানের আমদানিকারক কে বা কারা সেটি জানা যায়নি। সূত্র আরও জানায়, বেনাপোল বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য চালানের সাথে অবৈধ পণ্য পাচার করে আনার হিড়িক চলছে। এই পণ্য চালানে তেমনটি হতে পারে। বৈধ পণ্যের সাথে বিপুল পরিমাণ অবৈধ পণ্য থাকতে পারে। যা সিএণ্ডএফ এজেন্টের গোচরে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্য একটি সুত্র জানায়, চোরাচালানী ও পাচারকারী সিণ্ডিকেটের মাধ্যমে ভারতীয় ট্রাকের আমদানিকৃত পণ্যের সাথে আসে বিপুল পরিমান অবৈধ পণ্য। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পণ্য এভাবে ভারত থেকে পাচার করে আনা হচ্ছে। চোরাচালানী সোবাহান, মাসুদ, বিল্লাল, আজিজ, মিনার, তরিকুল, ইয়াকুব, জিয়া পাচার সিন্ডিকেটের সদস্যরা বন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে ট্রাক প্রবেশের পর স্কেল টার্মিনাল বা শেডে ট্রাক আগেই অবৈধভাবে আনা পণ্য নামিয়ে এসব পণ্য নেয়া হয় কুখ্যাত আওয়ামী ক্যাডার ইয়াকুবের বাড়িসহ তার পাশের কয়েকটি বাড়িতে। এরপর এসব পণ্য পাচার করে মাসুদের সিপাহশালার তরিকুল-জনি ও জিয়ার মাধ্যমে পাঠানো হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। বেনাপোলে বসবাসরত চুয়াডাঙ্গার বিল্লাল ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান সরবরাহ করে। এভাবেই তারা হাতিয়ে নেয় কাড়ি কাড়ি টাকা। এই চক্রের দৌরাত্মের কারণে সরকার কোটি কোটি টাকা শুল্ক হারাচ্ছে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য নিয়ে আসার কারণে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। স্থল বন্দরের বেনাপোলের আলোচিত চোরাচালানী মাসুদ, সোবাহান, বিল্লাল, আজিজ, মিনার, তরিকুল, ইয়াকুব, জিয়া পাচার সিন্ডিকেটের কারণে বনে যাচ্ছে কোটিপতি। স্থানীয়দের দাবি দেয়া বিতর্কিত চোরাচালানী সোবাহান, মাসুদ, বিল্লাল, আজিজ, মিনার, তরিকুল, ইয়াকুব, জিয়া আটক করে আইনের আওতায় আসলেই এই সিণ্ডিকেটের দৌরাত্ম কমবে। আটক কাভার্ড ভ্যান আটকের বিষয়ে বেনাপোল স্থল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন বলেন, আমি গোপণ একটি তথ্যের ভিত্তিতে গাড়িটি মঙ্গলবার রাতে আটক করি। গাড়িটি দেখার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। গাড়ি আটকের সময় দ্রুত ওই গাড়ির চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। তবে এখনো গাড়িটি আমাদের তত্বাবধায়নে আছে। গাড়িটি পণ্য যাচাই বাছাই কখন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কাস্টমসের বিষয়। তারা যখন চাইবে তখন যাচাই বাছাই করবে কি পণ্য আছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত ১২ টার দিকে যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল বন্দরে কাভার্ডভ্যান ভর্তি ২ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার ৯৩০ টাকা মূল্যের ভারতীয় শাড়ী, থ্রি পিচ, ঔষধ, মোটর সাইকেলের টায়ার এবং বিভিন্ন প্রকার কসমেটিক্স সামগ্রী আটক করেছে যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়নের বর্ডার গার্ড বিজিবি সদস্যরা। বেনাপোল বন্দরের বাইপাস সড়কে অভিযান চালিয়ে কাগজপত্র বিহীন এ পণ্যের চালানটি আটক করা হয়। ভারত থেকে দীর্ঘদিন ধরে আমদানিকৃত পণ্যের ট্রাকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসছে কোটি কোটি টাকার চোরাচালানী পণ্য। এ কাজে সংঘবদ্ধ একটি চক্র বেজায় তৎপর। এদের শীর্ষে রয়েছে আলোচিত চোরাচালানী ও পাচারকারী সোবাহান-মাসুদ- বিল্লাল-আজিজ-তরিকুল-মিনার-ইয়াকুব সিন্ডিকেট। বিষয়টি সবারই জানা তারপরও অদৃশ্য কারণে সংশ্লিষ্টরা নিরব বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়