১০ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

মানবপাচার ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে

বেকারত্বের অভিশাপ ঘুচাতে কিংবা সামান্য উন্নত জীবনের আশায় মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে বা অন্যান্য উপায়ে অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমায়। আবার অনেককে ফাঁদে ফেলে জোরপূর্বক নৌকায় তুলে দেওয়া হয়। এদের অনেকেরই সলিল সমাধি হয়, কারো কারো ঠাঁই হয় থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার জঙ্গলের গণকবরে। অনেকে মুক্তিপণ আদায়ের চক্রে পড়ে।অনেককে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রিও করে দেওয়া হয়। আবার ইউরোপে পাঠানোর নাম করে লিবিয়ার মরুভূমিতে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের খবর প্রায়ই পাওয়া যায়। ভূমধ্যসাগরেও প্রাণ গেছে বহু বাংলাদেশি তরুণের। তবু থামছে না মানবপাচার চক্রের দৌরাত্ম্য।
গতকাল প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড়ের গহিনে বিজিবি ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে জড়ো করা ৮৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় মানবপাচার চক্রের তিন সদস্যকে আটক করা হয়। এ সময় মানবপাচারকারী চক্রের আস্তানা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একনলা বন্দুক, একটি ওয়ান শ্যুটার গান, পিস্তল ও বন্দুকের গুলিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। গত সোমবার সকাল ১১টায় টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব ও বিজিবি।গত রবিবার রাত ১০টা থেকে সোমবার ভোররাত পর্যন্ত অভিযান চলে। আটককৃত তিনজন হলেন উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর কচ্ছপিয়া এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (২১), রাজারছড়া এলাকার সাইফুল ইসলাম (২০) ও মো. ইব্রাহিম (২১)।
গত শনিবার প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতেও অনুরূপ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অংশ নেয় নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের একটি যৌথ দল। সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকার একটি পাহাড়ি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৬৬ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করা হয়।বিভিন্ন এলাকা থেকে এদের এনে এখানে জড়ো করা হয়েছিল।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়া মানুষের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রায়শ বাংলাদেশ থাকে শীর্ষস্থানে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ছয় লাখের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করে। এই সময়ে সাগরে ডুবে মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। অনেকের মৃত্যু হয় মরুভূমিতে অনাহারে বা তৃষ্ণায়। মৃত্যু হয় নিপীড়নেও। শুধু তা-ই নয়, পথে পথে এবং গন্তব্য দেশগুলোতে পৌঁছেও এদের প্রায় সবাইকে (নারী-পুরুষ-শিশু-নির্বিশেষে) নানা ধরনের বিকৃত যৌনাচারের শিকার হতে হয়। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ও জেনেভাভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা উইমেন্স রিফিউজি কাউন্সিলের (ডব্লিউআরসি) প্রতিবেদনে এমন করুণ চিত্রই উঠে এসেছে। কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসা অনেক যুবকও একই ধরনের অভিযোগ করেছে। কিন্তু মানবপাচার চক্রগুলো সারা দেশে তাদের শক্ত নেটওয়ার্ক নিয়ে বহাল তবিয়তেই রয়ে গেছে।
বেকারত্ব যত বাড়বে অবৈধ পথে বিদেশ গমনের প্রবণতা তত বাড়বে। বেকারের সংখ্যাধিক্যের কারণেই বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি পাচারচক্রের নেটওয়ার্ক ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। তদুপরি রয়েছে দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থা। অনেক সময় কিছু পাচারকারী ধরা পড়ে, আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। অনেক ভুক্তভোগী পরিবার থেকে মামলা করা হয়, কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতা পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। আমরা মনে করি, পাচার রোধে কঠোর ও সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়