১১ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে অপহরণ

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। খুনাখুনি এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। মব ভায়োলেন্স, চাঁদাবাজি জনজীবনকে অতীষ্ঠ করে তুলেছে। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা রাতে নয়, দিনদুপুরেও ঘটছে।
মাদক ব্যবসা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা অনেক বেড়েছে। কিশোর গ্যাং নামের অরাজকতা সৃষ্টির প্রতিযোগিতা চলছে। বেড়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার।ফলে দেশজুড়েই মানুষ চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। এর মধ্যে আরো বড় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে অপহরণ ও জিম্মি করে অর্থ আদায়।গতকাল প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, দেশে অপহরণসংক্রান্ত অপরাধের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। গত এক বছরে এই হার বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে অপহরণের শিকার হয়েছে ৭১৫ জন। গত বছর এই একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ৩৪০। অপহরণের দিক থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এই এক মাসেই অপহরণের শিকার হয়েছে ১০৯ জন। আর গত আট মাসে গড়ে প্রতিদিন তিনজনের বেশি মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চিত্র আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতিরই ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের প্রকাশিত মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যান এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পর্যবেক্ষণে সংখ্যাগত কিছু পার্থক্য থাকলেও অপরাধ বৃদ্ধির চিত্র প্রায় একই। ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাস এবং ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনামূলক চিত্রই বলে দেয় অপহরণের সংখ্যা কিভাবে বাড়ছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৫১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৩ জন, মার্চে ৫১ জন, এপ্রিলে ৫৫ জন, মে মাসে ৫০ জন এবং জুন মাসে ৩১ জন অপহরণের শিকার হয়েছিল। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ১০৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭৮ জন, মার্চে ৮৩ জন, এপ্রিলে ৮৮ জন, মেতে ৮২ জন, জুনে ৮০ জন অপহরণে শিকার হয়েছে। আগেই বলা হয়েছে জুলাই মাসে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৯-এ।সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘যখন কোনো অপরাধ বেড়ে যায়, তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কোনো একটি কারণ উপস্থাপন করে তার বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে নিয়ন্ত্রকদের এমন ব্যাখ্যা দাঁড় করানো অপেশাদারির লক্ষণ। এই চেষ্টার কারণে অপরাধীরা নানাভাবে সুযোগ পায়।’ তিনি বলেন, ‘গড়ে দৈনিক তিনজন অপহরণের অর্থ হলো দেশে আইনের শাসনের বড় ঘাটতি রয়েছে।’
অপহরণের পাশাপাশি মব সন্ত্রাসও মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ভয়েস ফর রিফর্ম ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত এক সমীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। জরিপের ফলাফলে আরো বলা হয়, নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে ৫৬ শতাংশ এবং রাতে চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে আছে ৬১ শতাংশ মানুষ।এই চিত্র কোনো সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজের চিত্র নয়। এমন দম বন্ধ করা অবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেই নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ওপর থেকে মানুষের আস্থা কমে যাবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়