১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

শারদীয় দুর্গাপূজা: আজ মহাসপ্তমী : কাল মহাঅষ্টমী

সুন্দর সাহা
সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। আজ মহাসপ্তমী পূজা। আজ প্রভাতে মহাসপ্তমীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও ঢাক-ঢোলক-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার স্বপরিবারে তিথি বিহিত পূজা শেষে সপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত শনিবার বোধন শেষে ষষ্ঠী তিথির সূচনা হয়েছে। গতকাল রোববার কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা-অর্চনা হয়েছে। সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস পর্বও শেষ হয়েছে। মন্দিরে মন্দিরে আর পূজামণ্ডপে ঢাকের বোল, মন্ত্র ও চন্ডীপাঠ, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে কেঁপে উঠেছে প্রতিটি পূজামণ্ডপ। এবার দেবীর গজে আগমন। ফল শষ্যপূর্ণা বসুন্ধরা। দেবী দোলায় গমন। ফল মড়ক। ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের বন্যা। শুরু হয়েছে অতিথি আপ্যায়ন। উৎসব-আনন্দে মেতে উঠেছে শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষ। বাহারি পোশাক আর অঙ্গসজ্জায় নিজেদের সাজিয়ে রাঙিয়ে তারা মন্দিরে-মণ্ডপে ভিড় করতে শুরু করেছে। দেবীর আরাধনা উপলক্ষে সারা দেশের পূজামণ্ডপেগুলোকে সাজানো হয়েছে রঙিন সাজে। উৎসবকে রঙিন করতে আয়োজন করা হয়েছে ভক্তিমূলক গান, আরতিসহ নানা বৈচিত্রময় অনুষ্ঠানমালার। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অবধি পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আবার সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ। এ পক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিনে মহালয়ার মাধ্যমেই দেবী দুর্গার আরাধনার সূচনা হয়। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন পূর্ণিমায়। এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও বাৎসরিক কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিন। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উৎসবের সূচনা ও কোজাগরি লক্ষ্মীপূজায় এর সমাপ্তি। দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি চিরায়ত সাংস্কৃতিক উৎসব। শরৎকালে বাংলার প্রতিটি ঘরে, পাড়ায়, মহল¬ায় দুর্গাপূজার আমেজ পরিলক্ষিত হয়। এদিকে, রোববার কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা-অর্চনার পর ভক্তরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন আজ মহাসপ্তমী পূজার। আজ সোমবার প্রভাতে মহাসপ্তমীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও ঢাক-ঢোলক-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার স্বপরিবারে তিথি বিহিত পূজা শেষে সপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ৬টায় সপ্তমী পূজা আরম্ভ ববে। সার্বজনীন এই উৎসবে সকল ধর্ম ও বর্ণের শিশু, যুবা, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষ সবাই মেতে উঠেন পরমানন্দে। এই মহান উৎসবটি ধর্মানুরাগী ভক্তদের হৃদয়ে যেমন আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটায়, তেমনি বাঙালি সর্বসাধারণের মনে-প্রাণে আনন্দ-উল্লাসের অনুভূতি যোগায়। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও জমজমাট পূজার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন যশোর জেলাসহ এ অঞ্চলের পূজারিরা। সংস্কৃতি ও ধর্মীয় উৎসব পালনে যশোর জেলার ঐতিহ্য সেই বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে। আর তা যদি হয় দুর্গাপূজার মতো সার্বজনীন উৎসব তাহলে তো কথাই নেই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পীঠস্থানখ্যাত বাংলাদেশ। এখানে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ঈদ-পূজা হয় একই দিনে। তারপরও মনে সংশয় দূরীভূত করতে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ইতিমধ্যে সারা দেশের মত যশোর জেলার মণ্ডপগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলাম এবং পুলিশ সুপার রওনক জাহানের নেতৃত্বে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার সদস্যের পাশাপাশি পূজা কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিমও নিরাপত্তার বিষয়ে সক্রিয় রয়েছেন।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়