২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুরবস্থা

অসুখবিসুখে দেশের বেশির ভাগ মানুষের প্রধান গন্তব্য সরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল। এ কারণে সরকারি হাসপাতালে, বিশেষ করে মেডিক্যাল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে রোগীদের দীর্ঘ সারি লেগেই থাকে। ক্যান্সার হাসপাতালসহ কিছু বিশেষায়িত হাসপাতালে রোগীদের টিকিট পেতেই ভোররাতে গিয়ে লাইন দিতে দেখা যায়। এরপর হাসপাতালে ভর্তি হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।অনেকে ভর্তিই হতে পারে না। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশের হাসপাতালের মেঝেতে প্রতিদিন ১২ হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। সেই হিসাবে বছরে মেঝেতে চিকিৎসা নেয় প্রায় ৪৪ লাখ রোগী। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যাওয়া রোগীর সংখ্যাও কম নয়। শয্যার অভাবে দিনে অন্তত কয়েক হাজার রোগীকে ফিরে যেতে হয়। শুধু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই দিনে গড়ে দুই হাজার রোগী মেঝেতে চিকিৎসা নেয়। একই চিত্র ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও।
এর বাইরে বিভাগীয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গড়ে এক হাজার ৫০০ রোগী এবং অন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে গড়ে এক হাজার রোগী মেঝেতে চিকিৎসা নেয়, যদিও দেশে গত পাঁচ বছরে সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু এতেও সংকট কাটছে না। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, দিনে ১৫ হাজার মানুষ হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নেয়। সেই হিসাবে বছরে মেঝেতে চিকিৎসা নেয় প্রায় ৫৪ লাখ ৩৫ হাজার রোগী। শয্যার অভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে না অন্তত আরো ১০ লাখ রোগী।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবারও অভাব রয়েছে। এতে রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে এবং জীবনহানিও বেশি হচ্ছে। তাঁরা মনে করেন, কেবল শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কারণ কোথাও শয্যা ফাঁকা থাকছে, কোথাও শয্যার অভাবে মেঝেতেও রোগীর জায়গা হচ্ছে না। এতে চিকিৎসা নিতে এসে রোগী এবং রোগীর আত্মীয়রাও সংক্রমিত হচ্ছে। বাদ পড়ছেন না চিকিৎসক ও নার্সরাও। তাই প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসাসেবায় জোর দিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, চিকিৎসাব্যবস্থা তিন স্তরের হওয়া জরুরি। যেমন—৮০ শতাংশ মানুষকে ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া; জেলা পর্যায়ে ৯৫ শতাংশ মানুষের সেবা নিশ্চিত করা; গুরুতর ৫ শতাংশ রোগী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেবে। তবেই শয্যার সংকট কমবে।
বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চিকিৎসকের অভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে রোগীরা ফিরে যায়। নার্স বা অন্যান্য লোকবলেরও অভাব রয়েছে। এক্স-রে মেশিনসহ যন্ত্রপাতি অচল থাকে, অ্যাম্বুল্যান্স বিকল, জেনারেটর বা আইপিএস না থাকায় বিদ্যুৎ গেলে পুরো হাসপাতাল থাকে অন্ধকারে—এমনই আরো অনেক দুরবস্থা। সেই সঙ্গে কর্তব্যে অবহেলা তো আছেই। তাই রাজধানীকেন্দ্রিক সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর থাকা অত্যধিক চাপ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কমিউনিটি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রমে গতি আনতে হবে। কিছু বিশেষায়িত হাসপাতালের সেবা জেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করতে হবে। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়