১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

বেনাপোল কাস্টমসে দুদকের হানা: ঘুষের টাকাসহ কর্মকর্তা শামিমাসহ দু জন ধরা : কর্তাকে রেখে এনজিও কর্মীকে হস্তান্তর

আনিছুর রহমান, বেনাপোল
বেনাপোল কাস্টমস হাউসে দুর্নীতি দমন কমিশনের দুদকের অভিযানে ঘুষের প্রায় ৩ লাখ টাকাসহ এক রাজস্ব কর্মকর্তা ও এনজিও সদস্যকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে। আটকের পর তাদের কাস্টমস কমিশনার এর রুমে নিয়ে ৪ ঘন্টা বৈঠক শেষে কর্মকর্তা শামিমা আক্তারকে রেখে এনজিও কর্মীকে থানায় হস্তান্তর করে। সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে এ অভিযান পরিচালনা করে বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ৮ টার সময় দুদক চলে যায়। যশোর জেলা দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত একটি টিম হঠাৎ বেনাপোল কাস্টমস হাউসে প্রবেশ করে রাজস্ব শাখা, মূল্যায়ন শাখা ও প্রশাসনিক দপ্তরসহ বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে তল্লাশি চালায়। এ সময় ঘুষ লেনদেনের নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তার এবং তার সহযোগী এনজিওর সদস্য হাসিবুর। দুদকের উপপরিচালক সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে গোপন তথ্য ছিল, কাস্টমস হাউসে ঘুষ বানিজ্য চলছে এবং মোটা অংকের টাকা লেনদেন হচ্ছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা অভিযান চালায়। আমরা কাস্টমস গেটে টাকাসহ এনজিও কর্মী হাসিবুর রহমানকে আটক করি। টাকা কার জানতে চাইলে তিনি বলেন এটাকা রাজস্ব কর্মকর্তা শামিমা আক্তার ম্যাডামের। পরে কাস্টমস হাউসে সুপার শামিমার কাছে গেলে তিনি টাকা তার বলে শিকার করে। এরপর কাস্টমস কমিশনারসহ অন্যান্য অফিসারদের সাথে বৈঠক শেষে এনজিও কর্মী হাসিবকে থানায় হস্তান্তর করা হয়। এবং যেহেতু হাতে শামিমার টাকা পাওয়া যায়নি তার বিষয় তদন্ত করা হবে। সে তার টাকা বলে শিকার করেছে আপনি বললেন তারপর তাকে কেন থানায় দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাস্টমস কমিশনারের অফিস রুমে সাংবাদিকদের ঢুকতে না দিয়ে ৪ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয় ব্রিফিং-এর জন্য। এরপর ব্রিফিং না দিয়ে দুদক কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের তিনি উল্লেখিত একথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রতিবাদের সময় দুদকের একজন স্টাফ সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্য মুলক আচারন করেন। এরপর সাংবাদিকরা দুদকের আচারনে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করে উর্ধ্বতন নতুন কর্মকর্তাদের দিয়ে এই ঘটনার তদন্তের দাবি করেন। সূত্র জানায়, প্রথমে ঘটনাস্থল থেকেই তিন লাখ ঘুষের টাকা উদ্ধার করে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তার এবং তার সহযোগী এনজিওর সদস্য হাসিবুরকে আটক করার কথা জানান দুদক কর্তারা। দুদক কর্মকর্তা আরও জানান, আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া কাস্টমসের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে অভিযান চলমান রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল জানান, বেনাপোল কাস্টমসে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের এই অভিযানকে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, নিয়মিত এমন অভিযান হলে ঘুষের প্রথা অনেকটাই কমে যাবে। বেনাপোল কাস্টমস হাউস দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। প্রতিদিন এখানে শত-শত কোটি-কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। তবে নানা সময় দুর্নীতির অভিযোগে আলোচনায় আসে এই বন্দরটি। প্রথমে আটককৃতদের বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার খালেদ মোহাম্মাদ আবু হোসেন এর রুমে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। এরপর অদৃশ্য কারণে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের মহা দুর্নীতিবাজ রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারকে ছেড়ে দেয়ায় ব্যবসায়ীদের সেই আশার গুড়ে বালি পড়েছে। গতমাসে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের দুর্নীতিবাজক রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের অনিয়ম- দুর্নীতি নিয়ে প্রতিদিনের কথায় সংবাদ প্রকাশ হয়। তারপর দুদকের এই অভিযানের পর সবার মনে যে আশার সঞ্চার হয়। রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারকে ছেড়ে দেয়ায় ব্যবসায়ীদের সেই আশা ম্লান হয়েছে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়