জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের সিদ্ধান্ত হলেও সেই গণভোট কবে ও কিভাবে হবে, তা নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তাব রেখেছে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল আগামী নভেম্বরে গণভোট দাবি করেছে। গত বুধবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমাপনী বৈঠকেও এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি।কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামত সমন্বয় করে দু-এক দিনের মধ্যেই সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে। কমিশন আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছে।
এদিকে জুলাই সনদের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, রাষ্ট্র সংস্কারের নামে জুলাই সনদ তৈরিতে যেসব প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা চলছে, তা দেশকে বিরাজনৈতিকীকরণের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা না বুঝেই বিরাজনৈতিকীকরণের পথে হাঁটছি। রাজনৈতিক দলগুলোও প্রচুর উৎসাহে নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করার প্রক্রিয়ায় শামিল হয়ে গেছে। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর দৈন্যের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।’ তাঁর মতে, সংস্কারের জন্য, জুলাই সনদ তৈরির জন্য ঐকমত্যের যে আলোচনা চলছে, তা বাস্তবায়িত হলে দলগুলো এই সনদের বাইরে নিজেদের আদর্শ-উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলতে পারবে না।দলগুলো সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনে পরিণত হবে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশাকে ধারণ করি। আমরা তা পূরণে সচেষ্ট থাকব। কিন্তু জুলাই ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অনেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র মেলাতে চায়। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে ছোট করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক আদেশে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ, জুলাই সনদ প্রণীত হওয়ার পর অঙ্গীকারনামা, নোট অব ডিসেন্টসহ বিস্তারিত তুলে ধরে সেটি স্বাক্ষরিত হবে। এ ক্ষেত্রে অঙ্গীকারনামায় যুক্ত করতে হবে, যারা যেভাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে তারা সেভাবে বাস্তবায়ন করবে। এর ভিত্তিতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এরপর গণভোট হবে। সেই গণভোটের রায় অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী দিনে যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করবে।’গত ৫ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো ‘গণভোট’ প্রশ্নে একমত হলেও ভোটের সময় ও প্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। এ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ মতামতও গ্রহণ করে কমিশন। ছয় মাস মেয়াদের কমিশন ১৫ আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর পরও দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ আরো এক মাস বাড়িয়ে ১৫ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। কমিশন আশা করছে, আগামী ১৫ তারিখ বা ১৭ তারিখের মধ্যে ঐতিহাসিক দলিলের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। ১৮-১৯ তারিখের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে।আমরা আশা করি, গণতান্ত্রিক রাজনীতির বহু মত ও পথের সমন্বয় করে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরো এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেবে।

