বটিয়াঘাটা সংবাদদাতা
খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকার পার্শ্ববর্তী ঘনবসতিপূর্ণ বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড উত্তর হরিণটানা। এই এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ৮-১০ হাজারের মতো। এত ঘনবসতি থাকার পরও এলাকাটির সড়কগুলোতে দীর্ঘ দিন ধরে নেওয়া হয়নি কোনো ধরনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্থাপনের উদ্যোগ। বিশেষ করে এলাকাটির সরকারি কেএএএম ফজলুল বারী প্রাইমারি স্কুল রোডে কোনো সুগঠিত পাকা ড্রেন না থাকায় বৃষ্টি ও মানুষের ব্যবহৃত দূষিত পানি নিষ্কাশনে চরম বিঘ্ন ঘটছে প্রতিনিয়ত। এতে এলাকাটির জনজীবন ক্রমশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতেই এলাকাটির অধিকাংশ ইটের সয়েলিংকৃত রাস্তা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। কখনো কখনো পানি সরতে লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত। ফলে, তুমুল ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। হাঁটু পানি পেরিয়েই তাই বর্ষা মৌসুমে যাতায়াত করতে হয় পথচারী, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীদের। এ ভোগান্তি নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনের তেমন দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বাধ্য হয়ে চলতি বছরের শুরুতে স্থানীয়দের পক্ষে বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদে উক্ত এলাকায় ড্রেন নির্মাণের আবেদন জানান উত্তর হরিণটানার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ২০২৫ সালের মে মাসের বটিয়াঘাটা উপজেলা পরিষদের ৩৫৫তম মাসিক সমন্বয় সভার কার্যবিবরণীতে ‘উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপ্যাল) মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন এবং মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (ইউটিএমআইডিপি)’-এর আওতায় কেএএএম ফজলুল বারী প্রাইমারি স্কুল রোড থেকে পূর্বপাড়া খাল (ভায়া আজাদ মেম্বারের বাড়ির পার্শ্বস্থ) সড়ক পর্যন্ত ১৪৪/২৮৪ মিটার চ্যানেলের আরসিসি ড্রেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় (স্মারক নং ০৫.০০.৪৭১২.০০০.০১.০০২.২৪-৩৯৯)। সেই সূত্র ধরে, গত ০৩ জুন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী স্বাক্ষরিত ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পটির নকশা সংবলিত কারিগরি প্রতিবেদন (স্মারক নং ৪৬.০২.৪৭১২.০০০. ১৪.৪৭৩. ১৯- ৯৬৩) খুলনা জেলা এলজিইডি দপ্তরে পাঠানো হয়। পরে সেটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটের আওতায় ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৫০৫ টাকা মূল্যের (প্রাক্কলিত) প্রস্তাবিত স্কিম (স্মারক নং ৪৬.০২.৪৭০০. ০০০.১৪.০৫৮.২৪-২২৮৬) আকারে গত ০১ জুলাই রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত এলজিইডির সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। তবে এরপর তিন মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানায়নি এলজিইডি। এ দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্বাভাবিকভাবে প্রতি বছর মে-জুন থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত বৃষ্টি থাকে। মাঝে মাঝে নিম্নচাপ ও বৃষ্টিবলয়ের কারণেও প্রচুর ভারি বর্ষণ হয় খুলনা অঞ্চলে। এতে বছরের অধিকাংশ সময়ই ফজলুল বারী প্রাইমারি স্কুল রোডটির কোনো না কোনো স্থান জলমগ্ন হয়ে থাকে বলে উল্লেখ করেন তারা। তারা আরও বলেন, ইতিমধ্যে এ বছরের অক্টোবর মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। এমতাবস্থায়, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে এলাকাটির সড়কগুলোতে সত্বর ড্রেনেজ নির্মাণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু না করলে প্রতি বছরের মতো আবারও তুমুল ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের। পাশাপাশি, ফের পানিবাহিত রোগের বিস্তার ঘটা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। তাই অবিলম্বে এলাকাটির সড়কগুলোতে পাকা ড্রেন নির্মাণের জোর দাবি জানান তাঁরা। এ বিষয়ে সরকারি কেএএএম ফজলুল বারী প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম রেজা বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের স্কুলের সামনে নিয়মিত জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে। একইসঙ্গে, স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। সড়কটিতে অবিলম্বে ড্রেন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই বলেও দাবি করেন তিনি। উত্তর হরিণটানা এলাকার বাসিন্দা মোঃ লিমন খান বলেন, সাত-আট বছর ধরে বাস করছি এই এলাকায়। একটু বৃষ্টিতেই এখানকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যায়। দূষিত পানি নিষ্কাশনেরও ব্যবস্থা নাই। শুধু একটা প্রশস্ত ড্রেনের অভাবেই এমনটা হয়। উত্তর হরিণটানার আরেক অধিবাসী ব্যাংকার রফিকুল ইসলাম বলেন, হরিণটানার এমদাদুল উলুম মাদ্রাসা ও ফজলুল বারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কটি এখানে যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কে পাকা ড্রেন না থাকায় পানি নিষ্কাশনে চরম বিঘ্ন ঘটে। রোগব্যাধিও ছড়ায়। তিনি অবিলম্বে আরসিসি ড্রেন নির্মাণের দাবি করেন। একই এলাকার বাসিন্দা সরকারি চাকরীজীবী মো. নাঈম প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি, যাতে দ্রুত ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয় এই এলাকায়। এ ছাড়া, ফজলুল বারী প্রাইমারি স্কুল সড়ক সত্বর পাকাকরণেরও দাবি জানান নাঈম। উক্ত এলাকার অপর বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আবু বকর ফজলুল বারী প্রাইমারি স্কুল রোড নিয়ে বলেন, ফজলুল বারী প্রাইমারি স্কুল রোড উত্তর হরিণটানার প্রবেশপথের মতো। এলাকার সবাই এখান দিয়ে যাতায়াত করে সবসময়। তাই এই রোড এভাবে থাকতে পারে না। জলাবদ্ধতা দূর করার সঙ্গে সঙ্গে রোগব্যাধির বিস্তার রোধের জন্য হলেও দ্রুত সড়কটিতে ড্রেন নির্মাণের দাবি করেন তিনি। ড্রেনেজ নির্মাণ প্রসঙ্গে খুলনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটা আরসিসি ড্রেন নির্মাণের জন্য খসড়া প্রকল্প ও নকশা তৈরি করেছি। সেটা ঢাকায় এলজিইডিতে পাঠানো হয়েছে অনুমোদনের জন্য। ইতিবাচক সংকেত এবং প্রাক্কলিত অর্থ পেলেই কাজ শুরু করা হবে বলে জানান কামরুল ইসলাম সরদার।