সাধারণত দুর্বল মানুষই অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হয়। ন্যায়বিচারের আশায় তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থা দুর্বলের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না। প্রায়ই দেখা যায়, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য সবল বা ক্ষমতাশালী আসামিপক্ষ বাদীপক্ষকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। শারীরিকভাবে আক্রমণ, এমনকি বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটে। দুর্বল বিচারপ্রার্থীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলে। আর্থিক কারণে এবং আসামিদের হুমকি-ধমকি মোকাবেলা করে বাদীপক্ষ অনেক ক্ষেত্রেই মামলা চালিয়ে যেতে পারে না। অথবা অন্যায়কে মেনে নিয়েই আপস করতে বাধ্য হতে হয়। এতে আইনের শাসনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশব্যাপী বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ-দুর্দশার যে চিত্র উঠে এসেছে, তা খুবই দুঃখজনক। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিচারপ্রার্থীকে নিরাপত্তাহীনতায় রেখে বিচারপ্রক্রিয়া কখনো পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপদ ও ভয়মুক্ত বিচারপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।’ মানবাধিকারকর্মী ও অ্যাড. ইসফাকুর রহমান গালিব বলেন, ‘সাক্ষী ও ভুক্তভোগী সুরক্ষা আইন দ্রুত প্রণয়ন ও কার্যকর করা জরুরি। আর প্রতিটি জেলায় ভিকটিম প্রোটেকশন সেল গঠন করা উচিত, যারা সাক্ষীর নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করবে। একই সঙ্গে হুমকির ঘটনায় পুলিশের দ্রুত সাড়া দেওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। পাশাপাশি জিডি বা অভিযোগ নেওয়ার পরপরই তদন্ত ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগীর সহায়তায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ও হেল্পলাইন সক্রিয় করতে হবে।’ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় গত ১৪ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের শিকার হন গৃহবধূ সৈয়দা ফাহমিদা তাহসিন কেয়া। এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় তাঁর স্বামী সিফাত আলীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। কিন্তু মামলার প্রায় দুই মাস পার হলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। উল্টো মামলা তুলে নিতে বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত ৩০ আগস্ট নেত্রকোনায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন কৃষক নূর মোহাম্মদ। এখানেও মামলার বাদী ও তাঁর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন আসামিরা। অনেক সময় আসামি গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও বাদীর ওপর চড়াও হন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ন্যায়বিচার পেতে মামলা করলেও বাদী নানা ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকিসহ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন। আসামিপক্ষ মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি, হুমকি প্রদর্শন করে। আদালতের দীর্ঘসূত্রতা ও প্রক্রিয়াগত জটিলতায় বিচারপ্রার্থীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অনেক সময় একটি মামলার রায় পেতে বছরের পর বছর, কখনো দশকও লেগে যায়। মামলার সঙ্গে জড়িত স্ট্যাম্প, ফটোকপি, ভ্যাট, পরিবহন এবং আইনজীবীর ফি প্রায়ই তাঁদের সামর্থ্যের বাইরে চলে যায়। দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের লিগ্যাল এইড ২০০০ অনুযায়ী, বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ থাকলেও অনেকে সে সেবা সম্পর্কে অজ্ঞ বা প্রক্রিয়াগত জটিলতায় সেটি পান না। সবলের অত্যাচার থেকে দুর্বলকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্রকে সেই দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে
Previous article
Next article
আরো দেখুন
কেশবপুরে ভাইপোর বিরুদ্ধে চাচার সংবাদ সম্মেলন
মাসুম বিল্লাহ, কেশবপুর
কেশবপুরে ভাইপো ওহেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার চাচা আবু বক্কার সিদ্দিক। সোমবার বিকেলে কেশবপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তিনি...
পাইকগাছায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল
মাজহারুল ইসলাম মিথুন, পাইকগাছা
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা কামনা করে পাইকগাছা উপজেলা ও পৌরসভা যুবদলের আয়োজনে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার...

