প্রতিদিনের ডেস্ক:
বাঙালি রান্নাঘরের সবচেয়ে বড় গুণ হলো সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে নানা ধরনের সুস্বাদু পদ তৈরি করতে পারে। মাছ, শাকসবজি ও ডাল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পদের বৈচিত্র্য – বাঙালি রন্ধনশৈলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এইসব রান্না করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যা খাবারের স্বাদকে করে আলাদা।আমাদের রান্নায় ভুনা ও চচ্চড়ি দুটি খুব পরিচিত নাম। নাম দুটি শুনলেই মুখে পানি চলে আসে। তরকারি ভুনা কিংবা চচ্চড়ি যেটাই হোক না কেন, খেতে কিন্তু সুস্বাদু। কিন্তু এই দুই রান্নার মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। আসুন জেনে নেওয়া যাক পার্থক্য কী-ভুনা মানে ঘন মসলার রাজত্বভুনা খাবার মূলত উচ্চ তাপে মসলা ভেজে মাছ, মাংস বা সবজি রান্না করার একটি পদ্ধতি। যা মধ্যপ্রাচ্য ও পারস্যর রন্ধনশৈলীর থেকে বাঙালি খাবারে যুক্ত হয়েছে। মুঘল আমলে এই ধরনের রান্নার ব্যবহার বৃদ্ধি পায়, যা পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।অন্যদিকে চচ্চড়ি রান্না একেবারেই অন্য রকম। চচ্চড়ি হয় মাখা মাখা ও শুকনা। এটি নিরামিষ ও আমিষ দুই রকমেরই হয়ে থাকে। তেল বা মসলা কম, কিন্তু স্বাদে কোনো ঘাটতি নেই। বাঙালি রান্নাঘরে চচ্চড়ি কোনো জমিদার বা রাজকীয রান্না থেকে সৃষ্টি হয়নি, উৎপত্তি হয়েছে সাধারণ বাঙালি পরিবারের রান্নাঘর থেকে। তাই চচ্চড়ি আমাদের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে।রান্নার পদ্ধতি ভুনা মানে হলো ধীরে ধীরে মসলা কষিয়ে তেল আলাদা করে রান্না। এখানে তেল ও মসলা দুটাই একটু বেশি ব্যবহার করা হয়। মাংস, মাছ বা ডিম-যাই রান্না করুন না কেন ভুনার আসল মজা মসলার ঘনত্বে। রান্নায় তেল আলাদা হলে বুঝতে হয়, রান্না ঠিক মতো ভুনা হয়েছে। এই খাবার উৎসব বা অতিথি আপ্যায়নের টেবিলে একেবারে মানানসই।চচ্চড়িতে যে কোনো মাছ বা সবজির সঙ্গে বিভিন্ন মসলা একসঙ্গে মেখে রান্না করা হয়। চচ্চড়ি রান্না করার সময় পানি খুব কম ব্যবহার করা হয় এবং এটি শুকনো বা মাখা মাখা হয়। গরম ভাতের সঙ্গে মাছের চচ্চড়ি বাঙালির জন্য লোভনীয় খাবার। ঝটপট ও কম তেলে রান্না করা যায় বলে ঝামেলাও কম। চচ্চড়ি গরম ভাতের সঙ্গে ডাল ও অন্যান্য পদের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।স্বাদের পার্থক্য চচ্চড়িতে সবজির বা মূল উপকরণের নিজস্ব স্বাদ প্রাধান্য পায়, যা হালকা এবং টাটকা থাকে। সবজির স্বাদের সঙ্গে হালকা তেলের মিশ্রণে একটা অন্যরকম স্বাদ তৈরি করে। এছাড়া চচ্চড়ির স্বাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হালকা পোড়া পোড়া ভাব।ভুনা রান্নার সময় প্রথমে পেঁয়াজ ও অন্যান্য মসলা ভালোভাবে ভাজা হয় এবং তারপর মূল উপাদান যোগ করা হয়। ভুনায় মসলার তীব্র স্বাদ থাকে। কষানোর ফলে মসলার গন্ধ ও স্বাদ খাবারের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যায়, যা চচ্চড়ির চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এটি সাধারণত তেল ও মসলার ঘন গ্রেভি বা ঝোলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।