কামরুজ্জামান মুকুল, বাগেরহাট
সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে আগামী ৩ নভেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী রাস পূজা। ৫ নভেম্বর ভোরের প্রথম জোয়ারের লোনা জলে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে। তবে দুবলার চরে এবারও বন্ধ রাস মেলা। জানা গেছে, রাস পূজাকে কেন্দ্র করে রাস মেলা গড়ে উঠেছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী ও পর্যটক রাস মেলায় অংশ নেয়। বন বিভাগ জানায়, রাস পূজায় সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবারও পুণ্যার্থী ছাড়া অন্য কোনো পর্যটক প্রবেশ করতে পারবেন না। পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশ করতে সঙ্গে রাখতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুমতিপত্র। সুন্দরবনে রাস পূজা শুরু হলে হরিণ শিকারিরা পুণ্যার্থী সেজে বনাঞ্চলে প্রবেশ করে। নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হরিণ শিকার করে। এছাড়া হাজার হাজার লোক সমাগমে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও প্লাস্টিক দূষণরোধে এ বছর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রাস উৎসব যেতে হবে বন বিভাগের ঠিক করে দেওয়া নির্দিষ্ট পাঁচটি পথে। নির্ধারিত পাঁচটি রুট হলো-বুড়িগোয়ালিনী-কোবাদক-বাটুলানদী-বলনদী-পাটকোষ্টা খাল-হংসরাজ নদী হয়ে দুবলার চর । কয়রা-কাশিয়াবাদ-খাসিটানা-বজবজা-আড়ুয়া শিবসা-মরজাত হয়েদুবলার চর । নলিয়ান স্টেশন-শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর । ঢাংমারী/চাঁদপাই স্টেশন-তিনকোনা দ্বীপ-পশুর নদী হয়ে দুবলার চর । বগী-বলেশ্বর-সুপতি-কচিখালী-শেলারচর হয়ে সুন্দরবনের বাহির দিয়ে দুবলার চর। বন বিভাগ আরও জানায়, রাস পূজায় বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র, শিকার সামগ্রী, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও শব্দদূষণকারী যন্ত্র বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর ধরে এই রাস পূজা চলে আসছে। হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু এই পূজা শুরু করেছিলেন। তিনি তার ভক্তদের নিয়ে রাস পূর্ণিমার তিথিতে দুবলার চরে পূজাআর্চনা ও সাগরের লোনা জলে স্নান করতেন। সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকেই ধীরে ধীরে দুবলার চরের রাস মেলার প্রচল ঘটে। পরবর্তীতে রাস মেলাকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি ও রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাস উৎসব উপলক্ষে দুবলার চরের আলোরকোলে রাধাকৃষ্ণের অস্থায়ী মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এ মন্দিরে ভক্তরা তাদের পূজাআর্চনা করবেন। ভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন বিভাগ পাঁচটি নির্দিষ্ট পথ নির্ধারণ করেছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, এ বছর রাস পূজায় শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা যেতে পারবেন। এর বাইরে রাস পূজার উদ্দেশে কোনো পর্যটক যেতে পারবেন না। রাস পূজায় আসা পুণ্যার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বনরক্ষীরা তাদের টহল কার্যক্রম জোরদার করবেন।

