দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ক্রমেই আরো তীব্র হচ্ছে। আর তার প্রভাবে অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য তৈরির জন্য গঠন করা হয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমিশনের কার্যক্রমই জাতীয় ঐক্য ‘বিনষ্ট’ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।আর তা নিয়ে রাজনীতিতে মতবিরোধ এখন তুঙ্গে। কমিশনের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতারণার অভিযোগ করেছে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর অনেক কিছু মেয়াদ শেষের আগমুহূর্তে পরিবর্তন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল তা মেনে নিতে পারছে না।
বিশেষ করে ‘গণভোট’ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো স্পষ্টতই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দল নভেম্বরেই অথবা নির্বাচনের আগে গণভোট চায়। অন্যদিকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দিন গণভোট চায়। এই ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বক্তৃতার মঞ্চ—প্রায় সবখানেই চলছে তুমুল তর্কবিতর্ক।দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হওয়ার পরও সর্বোচ্চ ধৈর্য দেখাতে চায় বিএনপি। কোনো ধরনের শক্তি প্রদর্শন বা রাজপথের কর্মসূচি দিয়ে দেশে আপাতত বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করতে চায় না দলটি। কারণ জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এখনো দিচ্ছে। বিএনপি আশা করছে, প্রধান উপদেষ্টা বাস্তবতার নিরিখে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষের প্রথম চাওয়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিএনপিও চায় দ্রুততম সময়ে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সরকার গঠিত হোক, যে কারণে বিএনপি সব সময় শান্তি ও চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে চলেছে। কিন্তু বিএনপি হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, কোনো অশুভ পক্ষ যদি দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়, নির্বাচন বানচাল করতে চায়, তাহলে বিএনপি বসে থাকবে না। তখন দেশ ও জনগণের স্বার্থে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবে দলটি। বিএনপি বলেছে, তারা কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট মেনে নেবে না। গণভোট হলে নির্বাচনের দিনই হতে হবে। আর যদি কোনো কারণে নির্বাচনের আগে গণভোটের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তাহলে বিএনপি আর বসে থাকবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশে ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কমিশন ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে। অঙ্গীকারনামায় ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠনের বিষয়টির উল্লেখ ছিল না। আবার সরকারের কাছে দেওয়া সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দেওয়া হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশ রাজনৈতিক দল ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে মনে করছে বামপন্থী দলগুলো। বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘এই সুপারিশ জাতীয় নির্বাচনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়ার এক অশুভ ইঙ্গিত। এই অবস্থায় গণতান্ত্রিক উত্তরণে এখন আন্দোলনের বিকল্প নেই।’
দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের কারণে জাতীয় ঐক্য নষ্ট হওয়ার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পুনরায় আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই।

