প্রতিদিনের ডেস্ক:
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ইমরান খানের বোনদের সাক্ষাৎকার, নতুন বিতর্কের সূত্রপাত
তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার (বাঁয়ে) এবং পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের বোন (ডানে)। ছবি : ডন।পাকিস্তানি তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার রবিবার তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের বোনদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারারের দাবি, সরকারের সাম্প্রতিক অর্জন থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা হিসেবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়া হয়েছে।বারবার ভাই ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাধা পাওয়ার পর তার বোন নরিন নিয়াজ এবং আরেক বোন আলিমা খান পৃথকভাবে ভারতীয় মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার প্রশ্ন তোলেন, ‘এই বোনরা কেন ভারতীয় চ্যানেল এবং আফগানিস্তানের চ্যানেলে গিয়ে তাদের ভাইয়ের জন্য কাঁদছেন? নরিন নিয়াজ ভারতীয় চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে কি মোদির নিন্দা করেছেন? সেই নিষ্পাপ শিশুদের কথা যারা শহীদ হয়েছেন, তিনি কি তাদের কথা বলেছেন? ইরতেজা আব্বাস বা মুরিদকে ও বাহাউলপুরে শহীদ হওয়া নাগরিকদের কথা কি উল্লেখ করেছেন? শহীদ সেনা ও তরুণ অফিসারদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন কি?’তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বোনদের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘যারা ভারতীয় চ্যানেলে গিয়ে পাকিস্তানকে কলঙ্কিত করে, তাদের উচিত লজ্জা পাওয়া।’ তিনি আরো বলেন, ভারতীয় চ্যানেলগুলো তাদের এই প্ল্যাটফর্ম দিচ্ছে কারণ তারা জানে, ‘এই পরিবার এবং এই দলের মনোভাব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।’তিনি নরিন নিয়াজের সমালোচনা করে বলেন, ‘ভারতীয় চ্যানেলে হিন্দুত্ববাদী মতবাদ বা ভারতের মুসলিমদের প্রতি সহিংসতা নিন্দা করেননি এবং ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের সমস্যা নিয়েও কিছু বলেননি।’তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘লজ্জা হওয়া উচিত! আপনি ভারতীয় চ্যানেলে গিয়ে অধিকৃত কাশ্মীর, মার্কা-ই-হক, শহীদদের কথা বলেননি, অথচ আপনারা শুধু দুর্নীতির মামলায় জড়িত এক বন্দির পীড়িত হওয়ার কথা বলে কান্নাকাটি করলেন?’তিনি জানান, এই পরিবার বিদেশি মিডিয়ায় ইমরানের স্বাস্থ্যে নিয়ে অযথা প্রচারণা করছে।তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। কোনো সমস্যা নেই। তিনি প্রতিদিন এক ঘণ্টা ট্রেডমিলে দৌড়ান। এই ধরনের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত বন্দি, যিনি পাঁচতারা হোটেলের সুবিধা ভোগ করছেন, এমন কাউকে পৃথিবীর অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।’তিনি আরো যোগ করেন, ‘নরিন খান সাহিবা, কেবল যদি আপনি সেখানে গিয়ে শহীদদের কথা বলতেন, সেই শিশু ইরতেজা আব্বাসের কথা বলতেন, মার্কা-ই-হকে বিজয়ের কথা বলতেন… যদি আপনি আপনার প্রধানমন্ত্রী ও চিফ অব আর্মি স্টাফকে শ্রদ্ধা জানাতেন এবং মোদির নিন্দা করতেন। কিন্তু আপনার জন্য রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ, পাকিস্তানকে কলঙ্কিত করা গুরুত্বপূর্ণ আর ব্যক্তিগত বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।’ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে বন্দি রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে, যার মধ্যে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযোগও অন্তর্ভুক্ত। গত শুক্রবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরানের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে এবং ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমও এ ধরনের খবর প্রচার করেছে। কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, তাকে আদিয়ালা কারাগার থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।তবে আদিয়ালা কারাগার কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘কারাগার থেকে ইমরান খানকে স্থানান্তর করার কোনো খবর সত্য নয়। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।’গত সপ্তাহে ইমরান খানের বোনরা আদিয়ালা জেলের বাইরে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেখানে পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে অন্যান্য পিটিআই সদস্যরাও ছিলেন। পিটিআই জানিয়েছে, আালিমা খান, ড. উজমা খান এবং নরিন জেলের বাইরে ‘শান্তিপূর্ণভাবে বসে ছিলেন। তখনই পুলিশ তাদেরকে জোরপূর্বক সরিয়ে হিংসভাবে আটক করেছে।তবে মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি, ২০২৩ সালের ৯ মে প্রথম দফায় ইমরানকে গ্রেপ্তারের পর যে সহিংসতা হয়েছিল, তার সঙ্গে ইমরানের বোনেরা সম্পৃক্ত ছিলেন।তারার বলেন, ‘ইমরান আহমেদ নিয়াজি সাহেবের এই তিন বোন ২০২৩ সালের ৯ মে কোর কমান্ডারের বাড়িতেও উপস্থিত হয়েছিলেন। যদি আমার আইনি মতামত চান, তাহলে বলব, তাদের উপস্থিতিটাই এ ক্ষেত্রে প্রমাণ…তারা ৯ মে সেখানে ছিলেন। তারা দলে দলে লোকজনকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে, তিনজনই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’

