১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

খাদ্য, স্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়নের শক্ত ভিত্তি

ড. রাধেশ্যাম সরকার
বাংলাদেশের অর্থনীতি, গ্রামীণ জীবিকা এবং খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম ভিত্তি হলো প্রাণিসম্পদ খাত। দুধ, ডিম, মাংস এবং পোল্ট্রি পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে এই খাত দেশের প্রয়োজনীয় প্রাণিজ প্রোটিনের বড় অংশ সরবরাহ করে এবং গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, প্রাণিসম্পদ খাত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে জাতীয় জিডিপিতে প্রায় ১.৯% অবদান রেখেছে এবং একই সময়ে কৃষিখাতের মধ্যে প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের অংশ ছিল প্রায় ১৬–১৬.৫%।
এই খাত গ্রামের বহু পরিবারের জন্য সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান, আয় এবং স্বনির্ভরতার সুযোগ তৈরি করে, যা দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। খাদ্য উৎপাদনের বিস্তার যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, ততটাই জরুরি এর পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করা এবং ভবিষ্যতে টেকসইতা নিশ্চিত করা। জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত কার্বন ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ, পানি দূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতি এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের মতো ঝুঁকি সরাসরি পশুপালনের সঙ্গে যুক্ত। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা না করলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে এবং পরিবেশও গুরুতরভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে।বিশ্বব্যাপী কৃষি উত্তরণের এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে। কীভাবে পশুপালনকে আধুনিক, পরিবেশবান্ধব এবং দায়িত্বপূর্ণ কাঠামোর মধ্যে আনা যায় তা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। শুধু উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, একই সঙ্গে প্রয়োজন যথাযথ দায়িত্ববোধ, সুশাসন, খামারি সচেতনতা এবং টেকসই পরিকল্পনা, যাতে আগামী প্রজন্মের জন্য খাদ্য নিরাপদ থাকে এবং পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য এবং প্রোটিনের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০ সালে যেখানে একজন মানুষের দৈনিক প্রোটিন গ্রহণ ছিল প্রায় ৬২ গ্রাম, এখন তা ৭৫ গ্রামের বেশি, যার একটি বড় অংশ আসে প্রাণিজ উৎস থেকে। এর ফলে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি এবং ছাগলের খামারের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এই প্রবৃদ্ধি অর্থনৈতিকভাবে উপকারী হলেও এর সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত চাপও যুক্ত হয়েছে। গবাদিপশু বিশেষত গরু ও ছাগলের পরিপাকক্রিয়ার ফলে মিথেন (CH₄) গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই মিথেনের বৈশিষ্ট্য হলো, এটি CO₂–এর তুলনায় প্রায় ২৮ গুণ বেশি উষ্ণায়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম। রুমেন নামক পাকস্থলীতে খাবার ভাঙার সময় হাজার হাজার ব্যাকটেরিয়া মিথেন উৎপাদন করে, যা বায়ুমণ্ডলে নিঃসৃত হয় এবং দ্রুত গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব বৃদ্ধি করে। আন্তর্জাতিক উদ্ভিদ ও খাদ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান (IFPRI)-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের কৃষিখাতে মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের প্রায় ৪০% আসে পশুপালন থেকে।
এছাড়া, ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক খামারগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রায়ই অপর্যাপ্ত। অধিকাংশ খামারের গোয়ালঘর ও বর্জ্য সরাসরি খালে, বিল বা নদীতে ফেলা হয়, যা পানিকে দূষিত করে এবং জৈব অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এর ফলে মাছ এবং জলজ জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খামারগুলোতে দ্রুত ও সস্তায় প্রাণিজ উৎপাদনের চাপের কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ছে। এর ফলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য মানুষের স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
একবিংশ শতকে দায়িত্বপূর্ণ পশুপালন মানে হলো খাদ্য উৎপাদন, পরিবেশ সংরক্ষণ, পশুস্বাস্থ্য, মানবস্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্যে একটি সুষম সমন্বয় তৈরি করা। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলিতে প্রোটিনের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানসম্মত প্রাণিজ প্রোটিন নিশ্চিত করা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। খামার-নির্ভর উন্নয়ন যদি পশুস্বাস্থ্যের অবনতির সঙ্গে মিলিত হয়, তাহলে তা সরাসরি খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলে। একই সঙ্গে, অতিমাত্রায় বর্জ্য নির্গমন, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার এবং অনিয়ন্ত্রিত পশুপালন পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
দীর্ঘমেয়াদে এটি মাটির উর্বরতা, পানি ও বাতাসের গুণমান এবং কৃষি উৎপাদনকে হুমকির মুখে ফেলে। তাই পরিবেশবান্ধব পশুপালন কেবল মানুষের জন্য নয়, পুরো বাস্তুতন্ত্রের জন্যও সুরক্ষা নিশ্চিত করে। পশুপালনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি হলো ব্যবস্থাপনা এবং রোগ প্রতিরোধ। পশুর মধ্যে মহামারি যেমন বার্ড ফ্লু বা নীপা ভাইরাস ছড়ালে তা মানুষের স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং সুসংহত বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা, নিয়মিত রোগনিয়ন্ত্রণ এবং পরিচর্যা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। দায়িত্বপূর্ণ পশুপালন শুধু উৎপাদন বৃদ্ধি নয়, বরং এটি খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জনস্বাস্থ্যের মধ্যে একটি সুষম সম্পর্ক স্থাপন করে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাত দেশের খাদ্য উৎপাদন, গ্রামীণ জীবিকা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে গতিশীল খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা ছাড়া এই খাতের উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী হওয়া সম্ভব নয়। তাই খামারের বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া, পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণে খামারভিত্তিক টয়লেট এবং স্লারি সিস্টেম তৈরি করা, প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে পশু স্বাস্থ্য-সেবা ডিজিটাল করা এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
দায়িত্বপূর্ণ পশুপালনের মূল ভিত্তি হলো সঠিক ব্যবস্থাপনা, উপযুক্ত বিনিয়োগ এবং খামারিদের সচেতনতা। প্রথমত, স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে ব্যালান্সড ফিড ব্যবহার, নিজস্ব সাইলেজ উৎপাদন এবং স্থানীয় খাদ্য উৎসের যথাযথ ব্যবহার। খামারের পরিবেশ সব সময় পরিষ্কার রাখা, পশুদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং রোগ শনাক্তকরণে সতর্ক থাকা খামার ব্যবস্থাপনার অপরিহার্য অংশ। পাশাপাশি পশুর সংখ্যা অনুযায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা দরকার, যাতে পরিবেশগত চাপ কমানো যায় এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস পায়।
দ্বিতীয়ত, বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিদিন গরু, মহিষ ও ছাগলের মোট বর্জ্য প্রায় ১.৬ কোটি টন, যা যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বায়োগ্যাস উৎপাদন, জৈবসার হিসেবে ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনাময় একটি খাত তৈরি করতে পারে। এটি শুধু পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করে না, বরং খামারিদের জন্য আয় ও খরচ সাশ্রয়েও সহায়ক। তৃতীয়ত, সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ইতোমধ্যে ‘জাতীয় প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন নীতি-২০২৩’ পাস করেছে, যা জৈবসার উৎপাদন, পশুখাদ্য মান নিয়ন্ত্রণ, খামার নিবন্ধন এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেয়। এই নীতির সঠিক বাস্তবায়ন খামার খাতকে আরও আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব করে তুলতে সহায়ক।
সবশেষে, খামারিদের সচেতনতা ছাড়া কোনো নীতিই পূর্ণ কার্যকর হয় না। ওষুধের ডোজ, টিকার সময়সূচি এবং রোগ চিকিৎসা যথাযথভাবে পালন করা, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শ গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, যেমন : বায়োসিকিউরিটি, ফিড ম্যানেজমেন্ট এবং খামার ডিজাইন, খামারকে দায়িত্বপূর্ণ ও টেকসই করার জন্য অপরিহার্য। সঠিক ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ এবং সচেতনতার সমন্বয়েই দায়িত্বপূর্ণ পশুপালন সম্ভব, যা খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য যে প্রযুক্তি এবং কৌশলগুলো সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে, তা হলো : পরিবেশবান্ধব খামার ডিজাইন, ডিজিটাল পশু স্বাস্থ্য নজরদারি, কৃত্রিম প্রজনন ও উন্নত জাতের ব্যবহার, বায়োগ্যাস প্লান্ট, অ্যান্টিবায়োটিক-রেসপনসিবল সিস্টেম এবং চারণভূমি উন্নয়ন। পরিবেশবান্ধব খামার ডিজাইন করলে বর্জ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায়, রেইন-ওয়াটার হারভেস্টিং করা সম্ভব হয়, প্রাকৃতিক বায়ুচলাচল বজায় থাকে এবং ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করে খামারের জ্বালানি ব্যবস্থাপনাকে আরও টেকসই করা যায়। ডিজিটাল পশু স্বাস্থ্য নজরদারি যেমন : ডিজিটাল হেলথ কার্ড, অনলাইনে রোগ রিপোর্টিং এবং পশু ট্রেসেবিলিটি বা লাইভস্টক ট্যাগিং রোগ বিস্তার দ্রুত শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
কৃত্রিম প্রজনন এবং উন্নত জাতের ব্যবহার খামারিদের জন্য অনেক সুবিধা নিয়ে আসে। উন্নত জাতের গরু বা ছাগল কম খাদ্যে বেশি উৎপাদন দেয়, যার ফলে বর্জ্য কমে এবং খরচও হ্রাস পায়। বায়োগ্যাস প্লান্টও খামারের টেকসই ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৬৪,০০০-এর বেশি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে, যা ক্ষুদ্র বায়োগ্যাস প্লান্ট হিসেবে গৃহস্থালির রান্নার জন্য গ্যাস সরবরাহ করতে সক্ষম এবং জ্বালানি-নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগ শনাক্তকরণের জন্য ল্যাব টেস্ট করা, অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে প্রোবায়োটিক ও ভ্যাকসিন ব্যবহার করা এবং AMR রেজিস্ট্রি তৈরি করা না হলে ভবিষ্যতে মানবস্বাস্থ্যে গুরুতর বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এছাড়া, দেশের মাত্র চার শতাংশ এলাকায় চারণভূমি থাকায় চারণভূমি উন্নয়নও অপরিহার্য। ব্লক-চারণভূমি, কমিউনিটি গ্রেজিং জোন এবং সাইলেজ উৎপাদনের মাধ্যমে পশুখাদ্য সংকট কমানো সম্ভব এবং খামারকে আরও স্থিতিশীল করা যায়।
দায়িত্বপূর্ণ পশুপালন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে নীতিগত কাঠামো ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কয়েকটি কৌশলগত দিক শক্তিশালী করতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নীতিনির্ধারণী সমন্বয়, যা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে যৌথ পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব অপরিহার্য, যেমন : গরুর খাদ্য-কার্যকারিতা বৃদ্ধি, মিথেন হ্রাস প্রযুক্তি, রোগনির্ণয় প্রযুক্তি এবং দেশীয় জাতের উন্নয়ন। খাদ্য নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা মান নিশ্চিত করাও অপরিহার্য, যাতে হরমোন, অ্যান্টিবায়োটিক বা রাসায়নিক মুক্ত নিরাপদ পশুপণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়, যা ভবিষ্যতের বাজার নির্ধারণ করবে।
একই সঙ্গে ক্ষুদ্র খামারিদের সহায়তা প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মোট খামারির প্রায় ৮০% ক্ষুদ্র খামারি, যাদের প্রতিটি সাধারণত এক থেকে পাঁচটি গরু বা ছাগল পালন করে। তাই তাদের জন্য সহজ ঋণ, সাশ্রয়ী ভ্যাকসিন, ইন্স্যুরেন্সসহ সুবিধা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকতে পারে বায়োসিকিউরিটি, ফিড ম্যানেজমেন্ট, খামার ডিজাইন এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, যা খামারিরা বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারবে। এই নীতিগত কাঠামো এবং পরিকল্পনার সমন্বয়ই দায়িত্বপূর্ণ পশুপালনকে টেকসই এবং আধুনিক করার মূল চাবিকাঠি, যা খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাত দেশের খাদ্য উৎপাদন, গ্রামীণ জীবিকা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে গতিশীল খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা ছাড়া এই খাতের উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী হওয়া সম্ভব নয়। তাই খামারের বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া, পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণে খামারভিত্তিক টয়লেট এবং স্লারি সিস্টেম তৈরি করা, প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে পশু স্বাস্থ্য-সেবা ডিজিটাল করা এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া পরিবেশবান্ধব খামার-ডিজাইন বাধ্যতামূলক করা এবং আমদানি-নির্ভর খাদ্য কমিয়ে দেশীয় খাবার ও সাইলেজ উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই খাত কেবল প্রোটিন সরবরাহের উৎস নয়, এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থানেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। তাই পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে দায়িত্বপূর্ণ পশুপালন নিশ্চিত করাই টেকসই ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য শর্ত।
লেখক: কৃষিবিদ, গবেষক ও কলামিষ্ট।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়