১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে চাঁদাবাজি লাগামহীন ও ভয়াল রূপ নিয়েছে। অহরহ খুনখারাবির ঘটনাও ঘটছে। সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজির পাশাপাশি নৌপথেও চলছে নিয়ন্ত্রণহীন চাঁদাবাজি। প্রকাশিত সাম্প্রতিক দুই প্রতিবেদনে (‘হাইওয়েতে ব্যাপক চাঁদাবাজি’ এবং ‘নৌপথে নিয়ন্ত্রণহীন চাঁদাবাজি’) এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, যেখানে পরিবহন শ্রমিক, ট্রাকচালক বা নৌযান শ্রমিক কেউই নিরাপদ নন।
প্রতিবেদন দুটি থেকে জানা যায়, পণ্য পরিবহনের প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি চেকপোস্টে কিংবা নদীর প্রত্যন্ত চরে অবাধে চলছে চাঁদা আদায়, মারধর, লুটপাট। এর সঙ্গে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা এবং শ্রমিক সংগঠনের নাম যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।হাইওয়েতে চাঁদাবাজির উচ্চমাত্রা পরিবহন খাতকে নাজেহাল করে তুলেছে। নওগাঁ থেকে ঢাকায় পণ্য আনতে এক ট্রাকচালকের দুই হাজার ৭৫০ টাকা চাঁদা দেওয়ার অভিজ্ঞতা কিংবা মেহেরপুর থেকে তিন টনের ট্রাকে তিন হাজার টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং প্রতিদিন হাজারো ট্রাকের চলাচলে এটিই নিয়মে পরিণত হয়েছে।
নৌপথের চিত্র আরো ভয়াবহ। মেঘনা, পদ্মা, শীতলক্ষ্যা থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র নৌযান আটকে চাঁদা আদায় করছে। শ্রমিকদের মারধর, মালপত্র লুট—সবই চলছে প্রকাশ্যে। ট্রলার বা বাল্কহেডে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ এ খাতের অস্বাভাবিকতার চিত্রই তুলে ধরে।নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ড মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।এই অবস্থায় হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ, গোয়েন্দা নজরদারি ও সদর দপ্তরের ছয় দফা নির্দেশনা অবশ্যই ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে প্রশ্ন হলো, এই নির্দেশনা কি মাঠ পর্যায়ে কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে? নৌপথেও বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের বদলে সমন্বিত নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রয়োজন। চাঁদাবাজদের হাতেনাতে ধরলেই ডিটেনশন, দ্রুত মামলা ও দ্রুত বিচার—এসব সিদ্ধান্ত যদি কঠোরভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে অপরাধীরা বার্তা পাবে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলে, অনেক সময়ই এসব উদ্যোগ কাগুজে উদ্যোগ হিসেবেই থেকে যায়।সড়ক ও নৌপথ দেশের অর্থনীতির প্রাণধারা। এই দুই খাত চাঁদাবাজির দখলে চলে গেলে কৃষক থেকে ব্যবসায়ী, ভোক্তা—সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে পণ্য পরিবহনের ওপর অতিরিক্ত ব্যয় বাজারকে অস্থিতিশীল করে, ভোক্তার জীবনযাত্রা কঠিন করে তোলে।
চাঁদাবাজি দমনে কেবল অভিযান নয়, দৃশ্যমান আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন। রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক দুর্নীতি ও অপরাধচক্রের দৌরাত্ম্য একযোগে মোকাবেলা করতে হবে। পরিবহন খাতকে মুক্ত করতে হলে শূন্য সহনশীলতার নীতি বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে। দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনের স্বার্থে এখনই প্রয়োজন দৃঢ়, স্বচ্ছ ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়