মো. সামছুল আলম
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষি হলেও প্রাণিসম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। গবাদিপশু ও হাঁস মুরগী পালন গ্রামীণ জনপদের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য; যা কালের পরিক্রমায় পরিবর্তিত হয়ে অর্থনীতির মজবুত ভিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই খাত প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশে প্রাণিজ আমিষের অন্যতম জোগানদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাত পুষ্টি নিরাপত্তা, মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত জাতিগঠন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখছে। জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, কৃষিজ জিডিপিতে ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং অর্থমূল্যে প্রাণিসম্পদ জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা (সূত্র: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর)।৮০’র দশকের মত এখন আর দেশের কোথাও খর্বাকায়, রুগ্ন, হাড্ড্সিার গরু দেখতে পাওয়া যায় না, যা আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রাণিসম্পদের বাণিজ্যিকীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ণ, কর্মসংস্থান এবং সমৃদ্ধ গ্রামীণ অর্থনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রাণিসম্পদের বিস্তৃতি আজ গ্রাম থেকে শহরে। লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত তরুণ এবং উদ্যমী জনগোষ্ঠির স্বপ্ন জড়িয়ে আছে এই প্রাণিসম্পদে। তাদের শ্রমঘন বিনিয়োগে খুঁজে পেয়েছে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। গ্রামীণ জনপদে প্রতিটি পরিবারে পারিবারিকভাবে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগী পালন একটি পরমপরা রীতি এবং পারিবারিক পুষ্টি ও আয়ের অন্যতম উৎস। প্রতিদিনই হাজার হাজার তরুণ যুক্ত হচ্ছে এই স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়িতে। বিবর্তনের এই ধারায় প্রথাগত গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগী পালন ব্যবস্থাপনায় এসেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক বাণিজ্যিক খামার।
বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ‘ফোরজি’ থেকে ‘ফাইভজি’তে যাচ্ছি। স্মার্টফোন এখন অনেক খামারির কাছেই আছে। পোলট্রি ও ডেইরি খামারের ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ ও সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া গরু কিংবা মুরগির আচরণ ক্যামেরা ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসে আমরা যে কোনো জায়গা থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারি এবং সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারি। তাছাড়া বড় খামারিরা বায়ুপ্রবাহ, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ব্যবহার ইন্টারনেট অব থিঙ্কস (আইওটি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেন্সরের মাধ্যমে ঘরে বা অফিসে বসেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে।
গবাদিপশু ও হাঁসমুরগীর জাত উন্নয়ন এবং লাগসই সেবা সম্প্রসারণ, এআই ও আইওটি এর মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে এই খাতে। উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। বর্তমানে দেশে প্রায় ২৫১.৭১ লাখ গরু, ১৫.৩২ লাখ মহিষ, ৩৯.৮১ লাখ ভেড়া, ২৭২.৯১ লাখ ছাগল এবং ৪,০৬৬.৫২ লাখ হাঁস-মুরগি পালিত হচ্ছে (সূত্র: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর)। তাছাড়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য হারে বিভিন্ন ধরনের সৌখিন পোষা পশু-পাখি পালন বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গবাদিপশু বা হাঁস-মুরগীর সংখ্যাই বৃদ্ধিই পেয়েছে তা নয়, পরিবর্তন এসেছে প্রাণিজ পণ্য উৎপাদনেও।
স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭১-’৭২ অর্থবছরে দুধ ১০ লক্ষ মেট্রিক টন, মাংস ৫ লক্ষ মেট্রিক টন এবং ১৫০ কোটি ডিমের উৎপাদন ছিল। যা বর্তমানে অসংখ্য ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং বড় উদ্যোক্তার বিনিয়োগ, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং প্রাণিসম্পদের বহুমাত্রিক আধুনিক সেবা সম্প্রসারণের ফলে ২০২৪-’২৫ অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ মে. টন দুধ, ৮৯ দশমিক ৫৪ লাখ মে. টন মাংস এবং ২ হাজার ৪৪০ কোটি ডিম (সূত্র: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর), যা দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা, প্রোটিনের চাহিদাপূরণ ও খাদ্য ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করছে। প্রাণিজ পণ্য উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় দেশ আজ মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ, দুধ উৎপাদনেও এসেছে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। আশা করা যায়, অতি অল্প সময়েই দেশ দুধ উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে।
এছাড়া একটা সময় ছিল যখন কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে পার্শ্ববর্তী দেশের অনুগ্রহের উপর তাকিয়ে থাকতে হতো; কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র আর নেই। বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে দেশীয় উৎস হতে এই চাহিদা শতভাগ পূরণ করেও গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকছে। আমদানি নির্ভরতা থেকে গবাদিপশু উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় এ সময় ঈদ কেন্দ্রিক নানা ধরনের ব্যবসা গ্রামীণ অর্থনীতিতে যুক্ত করে নতুন মাত্রা। মৌসুমী এই ব্যবসায় লেনদেনকৃত অর্থের সিংহ ভাগ ধনিক শ্রেণি থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে স্থানান্তরিত হয়। কোরবানিকে কেন্দ্র করে দেশের অন্যতম রপ্তানিপণ্য চামড়ার একটি বড় জোগান আসে। ট্যানারি শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) তথ্য বলছে, বছরে প্রায় ৩০ কোটি স্কয়ার ফুট চামড়ার মধ্যে ২০ কোটি স্কয়ার ফুট চামড়া রপ্তানি হচ্ছে, যার রফতানি আয় প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য বলছে, দেশের অভ্যন্তরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার বা সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকার। তবে চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন বর্তমান সময়ের জোর দাবি।
অন্যদিকে পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থানের খাত-যেখানে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি বেসরকারি বিনিয়োগ রয়েছে। দেশে নিবন্ধিত ৮৫,২২৭টি বাণিজ্যিক এবং প্রায় ১,৯১,০০০টি প্রান্তিক পোল্ট্রি খামার রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ৬৮ লক্ষ ডিম উৎপাদিত হচ্ছে- যা নিঃসন্দেহে এক বড় সাফল্য।আমাদের প্রাণিজ খাদ্যের ভোগের হার বাড়ছে। কিন্তু এটি সুষম হারে বাড়ছে কি না, সেদিকে নজর দিতে হবে। যাদের পুষ্টির প্রয়োজন, তারা প্রাণিজ আমিষ ভোগের মাধ্যমে পুষ্টি পাচ্ছে কি না, সেটি লক্ষ রাখতে হবে। দুধ, ডিম ও মাংসের দাম দেশের দরিদ্র জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে না পরলে আমরা কখনোই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব না। সুস্থ ও মেধাবী জাতি গড়ে ওঠবেনা।
এবার দেশে প্রথমবারের মত জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫-এর স্লোগানে দেশীয় জাতের প্রাণীর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। দেশীয় জাতের গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কৃত্রিম প্রজনন কর্মসূচি বড় ভ‚মিকা পালন করছে। দেশি জাতের গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে উন্নত জাতের গবাদিপশুর দ্বারা দেশি গাভীর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর জন্য প্রতিবছর প্রায় ৪২ লাখ ডোজ সিমেন সরবরাহ করা হয়ে থাকে।সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এ কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ায় দেশি গবাদিপশুর জিনগত উন্নয়ন ও উৎপাদনক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) প্রতিরোধে ১৭ লক্ষ ডোজ টিকা, ক্ষুরা রোগ (এফএমডি) নির্মূলে নির্দিষ্ট অঞ্চলে জোনিং কার্যক্রম এবং ছাগলের পিপিআর রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৬ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে (সূত্র: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর)।
দেশীয় প্রাণিসম্পদ শুধু উৎপাদনশীলতার জন্য নয়, গ্রামীণ খাদ্যচাহিদা, সংরক্ষণ সুবিধা, নারীর কর্মসংস্থান ও কৃষির ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে শিল্প হিসেবে দেখা হলেও উৎপাদনের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এখনও গ্রামীণ সাধারণ মানুষের হাতেই হচ্ছে। শিল্পায়ন প্রয়োজন, তবে দেশীয় প্রজাতির সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষ করে সংকর জাত তৈরির সময় যেন দেশীয় জাতের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে না যায় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। দেশীয় জাতের মাছ, মাংস ও প্রাণিসম্পদ বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ, যেগুলো রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। আশার কথা হলো, পৃথিবীর অনেক দেশের যে-সব প্রাণিসম্পদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে, সেগুলোর অনেকগুলোই আমাদের দেশে টিকে আছে।প্রাণিজ পণ্য বিশেষ করে মাংস, ডিম, দুধ কেনার ক্ষেত্রে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিন্মবিত্ত সকলের একটাই চাওয়া দেশীয় প্রাণীর পণ্য গ্রহণ করা। বর্তমান সময়ে বাজারে দেশীয় গবাদি-পশু পাখির পণ্য পাওয়া যেন দুর্লভ। আজ থেকে দুই দশক আগেও মানুষের প্রাণিজ আমিষের প্রায় সবটুকু জোগান আসতো দেশি গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হাঁস ও মুরগি থেকে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বাজারে এগুলোর প্রাপ্যতা হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে।
মাছ, মাংস, দুধ, ডিমসহ প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জায়গা করে নেওয়া সত্তে¡ও দেশের দেড় থেকে ২ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। এই সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশের অন্তত ১০ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। সে হিসাবে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৮ কোটি ধরা হলে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। আর যদি জনসংখ্যা ধরা হয় ২০ কোটি, তাহলে অপুষ্টিতে ভোগা জনসংখ্যা দাঁড়ায় ২ কোটি। এর মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নারী ও শিশু।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রতি কেজি শারীরিক ওজনের জন্য শূন্য দশমিক ৮ থেকে ১ গ্রাম প্রোটিনের দরকার হয়। অর্থাৎ একজন মানুষের ওজন যদি ৭৫ কেজি হয়, তাহলে তাকে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭৫ গ্রাম প্রোটিন খেতে হবে। মাছ-মাংসের ভিন্নতা বা প্রজাতিভেদে প্রতি ১০০ গ্রাম মাছ বা মাংস থেকে ১৯ থেকে ২৫ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন পাওয়া যায়। একটি মাঝারি আকারের ডিম থেকেও আকারভেদে ছয় থেকে আট গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ মিলিলিটার দুধে ৪ থেকে ৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে।আমাদের প্রোটিনের উৎস দুই প্রকারের। একটি প্রাণিজ প্রোটিন, একে ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন বলা হয়। অন্যটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, একে সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন বলা হয়। ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিনে সব ধরনের এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি থাকলেও সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিনে এক বা একাধিক এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিডের ঘাটতি থাকে। বাড়ন্ত শিশুর দেহ গঠনের জন্য প্রাণিজ প্রোটিনের গুরুত্ব অপরিসীম, বিশেষ করে দেহ গঠনের জন্য দুধ অত্যন্ত জরুরি।দেহ গঠনের জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবই দুধে উপস্থিত। এ ছাড়া ডিম ও মাংস দেহ গঠনে ভূমিকা রাখে। আমাদের প্রাণিজ খাদ্যের ভোগের হার বাড়ছে। কিন্তু এটি সুষম হারে বাড়ছে কি না, সেদিকে নজর দিতে হবে। যাদের পুষ্টির প্রয়োজন, তারা প্রাণিজ আমিষ ভোগের মাধ্যমে পুষ্টি পাচ্ছে কি না, সেটি লক্ষ রাখতে হবে। দুধ, ডিম ও মাংসের দাম দেশের দরিদ্র জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে না পরলে আমরা কখনোই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব না। সুস্থ ও মেধাবী জাতি গড়ে ওঠবেনা।
প্রাণিসম্পদে উপোরোল্লিখিত অর্জনসমূহকে টেকসই ও আরও সমৃদ্ধ করতে মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রচেষ্টায় “দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি : প্রাণিসম্পদে হবে উন্নতি” এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দেশে প্রথমবারের মতো “জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ-২০২৫” ২৬ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একযোগে সারাদেশে উদ্যাপিত হয়েছে।
দেশীয় জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার, রোগ প্রতিরোধ, প্রাণির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রদত্ত সেবা, গবেষণালব্ধ ফলাফল এবং সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে খামারি ও উদ্যোক্তাদের সচেতন করা তথা নিরাপদ প্রাণিজ প্রোটিন উৎপাদন ও এই খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করাই এবারের এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আয়োজিত এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাত তার বিদ্যমান সকল চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠবে। এতে করে সুস্থ, সবল ও মেধাবী জাতির সমন্বয়ে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। ।
লেখক : গণযোগাযোগ কর্মকর্তা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

