১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

নালায় পরিণত শৈলমারী নদী বর্ষায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা

বটিয়াঘাটা সংবাদদাতা
বটিয়াঘাটা উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা শৈলমারী নদী পরিণত হয়েছে নালায়। ১৯৯৬ সালে উক্ত নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ ও উজানের পানির চাপ না থাকায় পলি পড়ে চর জেগে মূল নদী নালায় পরিণত হয়েছে। উপজেলার উক্ত নদী সংলগ্ন এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত স্লুইচ গেটগুলো সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ায় বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে এ অঞ্চলের পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের রোগ ও মশা মাছির উপদ্রব।
বটিয়াঘাটা উপজেলার ১নং জলমা, বটিয়াঘাটা সদর, গঙ্গারামপুর ও সুরখালী ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয়া উপজেলার উত্তর ডুমুরিয়া বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে শৈলমারী নদী। জলমা ইউনিয়ন ও উত্তর ডুমুরিয়া এবং বিল ডাকাতিয়া এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড জলমা ইউনিয়নের রামদিয়া ৯ কপাটি স্লুইস গেট নির্মাণ করলেও নদীর অস্তিত্ব সংকটের কারণে তা আর ব্যবহার হচ্ছে না। এদিকে পানি নিষ্কাশনের অভাবে মৎস্য ও বোরো এবং রবি মৌসুমে ফসল উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি খুলনা জেলা ও ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসন এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পাম্প মেশিন স্থাপন করলেও বাস্তবে তা ফলপ্রসূ হয়নি। অন্যদিকে সুযোগ সন্ধানী একটি চক্র চর দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। রাতারাতি ওই চক্রটি মাটি কেটে জেগে ওঠা চরের শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলছে। দখলদারদের মধ্যে রয়েছে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, ভূমিদস্যু ও নদীপাড়ের স্বার্থান্বেষী মানুষ। দখল করা চরে চোখের নিমিষেই দখলদাররা তাদের দখলকৃত জায়গার চারপাশে উঁচু ভেড়ি বাঁধ দিয়ে কেউ ভরছে বালি দিয়ে। আবার কেউ বাঁধ দেওয়া জায়গায় মাছ চাষ করছে। দিনের পর দিন এভাবে চর দখল হওয়ায় সংকুচিত হয়ে পড়ছে নদীর প্রশস্ততা। যে কারণে আগামী বর্ষা মৌসুমে পানির চাপে প্লাবিত হয়ে সৃষ্টি হতে পারে জলাবদ্ধতা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বটিয়াঘাটা সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈলমারী নদী শাখা নদী হয়ে পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয়া উপজেলার সাথে মিশেছে। নদীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বটিয়াঘাটা ব্রিজের উপর থেকে একটু পশ্চিম দিকে তাকালেই শৈলমারী খেয়াঘাট। এখানে রয়েছে শৈলমারী নদীর মুখে ১০ ভেন্টের (কপাট) স্লুইস গেট। যার সাথে টানানো রয়েছে একটি সাইন বোর্ড। তাতে লেখা ব্যক্তি মালিকানাধীন এই জমিতে স্লুইস গেট তৈরি করেছে পাউবো। লাখ লাখ টাকায় নির্মিত ওই স্লুইস গেট দিয়ে সঠিক সময় পানি সরবরাহের বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ত নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোপূর্বে খুলনা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত করে শৈলমারী নদীর খাস জমি দখলদারদের তালিকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অভিযোগ শাখায় প্রেরণ করলেও এখনও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যে কারণে দিন দিন বাড়ছে দখলদারের সংখ্যা।এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘ ৮-১০ বছর ধরে ধীরে ধীরে এই নদীর মৃত্যু ঘটেছে। এক সময় এই নদীর প্রবল শ্রোতের কারণে নৌকা চালানো কঠিন ছিল। অথচ ভাটার সময় এখন হেঁটে পার হওয়া যায়। যেভাবে দু-পাড়ের চর দখল হচ্ছে অবস্থাদৃষ্টে মনে হবে বহমান নদীর অস্তিত্ব একেবারেই বিলীন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শোয়েব শাত-ঈল ইভান বলেন, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি সরকারি সম্পত্তি দখল করলে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্তা গ্রহণ করা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। খুব দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিয়ে নদীটির অস্তিত্ব রক্ষায় খননকাজ শুরু করবেন।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়