প্রতিদিনের ডেস্ক:
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দুই দিনের ভারত সফর শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর)। সফরের কর্মসূচিতে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া ব্যক্তিগত নৈশভোজ ও ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ বৈঠক।জানা গেছে, পুতিন বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে পৌঁছাবেন। পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নরেন্দ্র মোদী তাকে ব্যক্তিগত নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানাবেন। গত জুলাইয়ে মোদীর মস্কো সফরের সময় পুতিনও একইভাবে ব্যক্তিগত নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। এবারও নৈশভোজটি অনানুষ্ঠানিক হবে বলে জানা গেছে, যাতে দুই নেতা আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে নিজেদের অবস্থান ও আলোচনার সুর ঠিক করে নিতে পারেন।শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে পুতিনের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শুরু হবে সম্মানসূচক অভ্যর্থনার মাধ্যমে। এরপর তিনি রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। ভারত সফরকারী রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য এটি এখন নিয়মিত অংশ।এরপর রাজধানীর হায়দরাবাদ হাউজে অনুষ্ঠিত হবে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনের অংশ হিসেবে পুতিন ও তার প্রতিনিধি দলের জন্য কর্ম-ভোজের আয়োজনও করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।এই বৈঠকে ভারত জোর দেবে রাশিয়া থেকে ঝুলে থাকা সামরিক হার্ডওয়্যার দ্রুত সরবরাহের ওপর। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর একাধিক সামরিক প্ল্যাটফর্মের সরবরাহে দেরি হচ্ছে বলে ভারতের উদ্বেগ রয়েছে।আলোচনায় মূলত উঠে আসবে অতিরিক্ত এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ২০১৮ সালে পাঁচটি এস-৪০০ ইউনিট কেনার জন্য ভারত পাঁচ বিলিয়ন অর্থাৎ ৫০০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছিল। এরই মধ্যে তিনটি স্কোয়াড্রন পেয়েছে ভারত, বাকি দুটি আগামী বছরের মাঝামাঝি আসার কথা। অপারেশন সিঁদুরে এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে দাবি ভারতের।ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, বৈঠকে ভারতের সু-৫৭ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনার আগ্রহও আলোচনায় আসতে পারে। ভারত বর্তমানে পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমান মূল্যায়ন করছে, যেখানে রাফালে, এফ-২১, এফ/এ-১৮ ও ইউরোফাইটার টাইফুনের মতো প্ল্যাটফর্মও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে।জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও বিস্তৃত আলোচনা হওয়ার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে রুশ অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ভারতের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে। পেসকভ বলেছেন, স্বল্প সময়ের জন্য ভারতের রাশিয়ান তেল কেনা কমতে পারে, তবে রাশিয়া সরবরাহ বজায় রাখতে কাজ করছে।মোদী-পুতিন বৈঠকের বাইরে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতের রাজনাথ সিং ও রাশিয়ার আন্দ্রে বেলৌসোভ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক হার্ডওয়্যার নিয়ে আলাদা বৈঠকে বসবেন।পুতিনের এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কিছুটা চাপে রয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে ও রাশিয়ান তেল আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ বিশেষ শুল্ক আরোপ করেছে।ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উদ্যোগ সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ব্রিফ করবেন পুতিন। ভারত বারবার বলছে, সংলাপ ও কূটনীতির পথেই সমাধান সম্ভব; আর এ অবস্থান ধরে রেখেই মস্কোর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সমালোচনা এড়িয়ে সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখতে চাইছে নয়াদিল্লি।

