১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বাজারে বাড়তি দামের ভোজ্যতেল

প্রতিদিনের ডেস্ক:
সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারকে পাশ কাটিয়ে দাম বাড়ানোর এই প্রচেষ্ঠা চলছে কয়েক মাস ধরেই। তবে এই দাম বাড়ানোর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই বলে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।তিনি বলেন, সরকারকে না জানিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।এদিকে, ঢাকার কারওয়ানবাজার, রামপুরা, বাড্ডা, সেগুনবাগিচাসহ কয়েকটি এলাকার খুচরা দোকান এবং কয়েকটি সুপারশপ ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করেছেন। অর্থাৎ, প্রতি লিটারে দাম বাড়ানো হয়েছে ৯ টাকা। একইভাবে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।তবে খুচরা বাজারের মুদি দোকানগুলোতে এখনো নতুন দামের তেলের সরবরাহ খুব বেশি নেই। বেশিরভাগ দোকানেই এখনো পুরনো দামের তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে কারওয়ানবাজারের এক মুদি দোকানে ৫ লিটারের রূপচাঁদার তেল ৯৬৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে যে বোতলের গায়ে উৎপাদনের তারিখ দেওয়া হয়েছে গত নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ। ৫ লিটারের বোতলে দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৩ টাকা।একইভাবে স্বপ্ন সুপাশপের অনলাইনে একই দামের ৫ লিটারের সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। যেখানে পাওয়া গেছে রূপচাঁদার পাশাপাশি বাড়তি দামের পুষ্টি ব্র্যান্ডের তেল। সুপারশপটির অনলাইনে অবশ্য তীর এবং রূপচাঁদার এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ১৯৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যদিও একটি কোম্পানির তেল এখনো সেখানে ১৮৯ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।এছাড়া, রূপচাঁদার দুই লিটারের বোতল অবশ্য ৩৭৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৯৬ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। অর্থাৎ দুই লিটারের বোতলে দাম বেড়েছে ১৮ টাকা।জানা গেছে, ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনষ্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন তেলের মূল্য পুননির্ধারণ করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে একটি চিঠি দেয়। যে দাম তারা গত মাসের ২৪ তারিখ থেকে বাড়ানোর কথা জানায়। তাদের নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, এক লিটারের বোতল ১৯৯ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৯৮৫ টাকা, খোলা সয়াবিনের লিটার ১৭৯ টাকা এবং পাম অয়েলের দাম ১৬৯ টাকা।তবে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার ব্যবসায়ীদের তেলের দাম বাড়ানোর অবেদনের অনুমোদন দেয়নি। সরকারের অনুমোদন ছাড়া ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে পারেন না।বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ব্যবসায়ীরা যে প্রক্রিয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছেন এর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকার কিছুই জানতো না। এটি আধাঘণ্টা আগে জেনেছি। কোম্পানিগুলো সামগ্রিকভাবে একত্র হয়ে এ কাজটি (ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো) করেছে। এই কাজটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করে কর্মপদ্ধতি ঠিক করবো। এটার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। গতকাল (মঙ্গলবার) আমরা ক্রয় কমিটিতে টিসিবির জন্য তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছি। সয়াবিন তেল ৫০ লাখ লিটার, রাইস ব্রান তেল এক কোটি লিটার। ওনারা (ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী) আজকে (বুধবার) যে দামে বাজারে বিক্রি করছেন, সেটা থেকে প্রায় ২০ টাকা কমে আমাদের তেল দিয়েছেন। তাই বাজারে ২০ টাকা বেশি দামে তেল দেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ তো আমি খুঁজে পাচ্ছি না। গতকালই আমরা তাদের (ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী) কাছ থেকে কিনেছি।ব্যবসায়ীদের ওপর ক্ষুব্ধ বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, নিয়ন্ত্রণ (ব্যবসায়ীদের উপর) আছে কি নেই সেটা আমাদের পদক্ষেপের মাধ্যমেই জানতে পারবেন, নিশ্চয়ই আছে। একটু ব্যবসায়ীদের এ প্রশ্ন করেন। আমরা পদক্ষেপগুলো নেবো, আলোচনায় বসেছি। এটা তো মার্কেটে গিয়ে তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করার জিনিস না।তিনি জানান, যারা আইন লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে নেওয়ার মতো যে ব্যবস্থাগুলো আছে তার সবটাই নেওয়া হবে।বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, যদি তেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিক কোনো কারণ থাকে, আমরা আনন্দের সঙ্গে আলোচনা করবো। আমরা তো সরবরাহ ব্যবস্থা গতিশীল রাখতে চাই। সরবরাহ ব্যবস্থা আমরা বিঘ্নিত করতে চাই না।এদিকে, আন্তর্জাতিকভাবে দাম বাড়ানোর অজুহাতে তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। এর আগে, গত ১৩ অক্টোবর ব্যবসায়ীরা হুট করেই সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৬ টাকা, প্রতি লিটার পাম অয়েলের দাম ১৩ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ৩ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম ২৩ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেটাও ছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই। সেই সময় উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত না হবে ততক্ষণ ম্যানুফেকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রেস রিলিজ দেওয়ার কোনো বৈধতা নেই। আমি তো এটা অনুমোদন দেইনি। যেটার অনুমোদন দেইনি সেই জিনিস প্রেস রিলিজ আকারে যাবে কেন।সে সময়েও ব্যবসায়ীরা কূট চালের আশ্রয় নিয়েছিলেন তেলের দাম বাড়ানোর জন্য। ১৩ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সচিব মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা। তিনি ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট হারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টিতে মৌখিকভাবে সায় দেন। তবে বৈঠক শেষে যখন সচিব বাণিজ্য উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য যান, তখন তৈরি হয় বিপত্তি।বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন দাম বৃদ্ধির বিষয়টিতে অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানান। এদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা অনুমোদন দেননি, এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তড়িঘড়ি করেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গণমাধ্যমকে জানান। পরবর্তীতে বাণিজ্য উপদেষ্টা কড়া প্রতিক্রিয়া জানালে ব্যবসায়ীরা ঘোষিত দামের ভোজ্যতেল বাজারজাত করেননি। এর আগেও ব্যবসায়ীরা একাধিকবার তেলের দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিল।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়