১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

দেশে সাংবাদিক নিপীড়ন চলছেই। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বছরের পর বছর ধরে নির্যাতিত হচ্ছেন সাংবাদিকরা। দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের পরিসংখ্যান দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হয় না।
ভয়ভীতি, হুমকি-ধমকি, মামলা-মোকদ্দমা, মারাত্মক শারীরিক নির্যাতনে জখম থেকে শুরু করে গুম কিংবা খুন নির্যাতনের এমন কোনো ধরন নেই, যার শিকার হচ্ছেন না সাংবাদিকরা। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর কিংবা মফস্বল—সর্বত্রই একই চিত্র। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এই চিত্র দুঃখজনক, যেখানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকদেরও রক্ত ঝরেছে এবং তাঁদের অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। অথচ ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের যে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ, তারই ধারাবাহিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পেলাম কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ঢাকতে এবং সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের রক্ষা করতেই তিনি অতি উত্সাহী হয়ে গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠের তালা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপুকে ১০ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। সাতক্ষীরা ও তালায় সাংবাদিকরা দফায় দফায় কর্মসূচির মাধ্যমে সাংবাদিক টিপুকে শাস্তি দেওয়ার প্রতিবাদ জানান। তাঁরা বলেছেন, এই রায় বিদ্বেষপ্রসূত।
টিপু উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলমের কাছে পানি, পাথর ও সিমেন্টের অনুপাত কেমন দেওয়া হচ্ছে তার তথ্য জানতে চান।
কিন্তু মামুন তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে টিপুর সঙ্গে মামুনের তর্ক হাতাহাতিতে গড়ায়। মামুন ও তাঁর অনুগত শ্রমিকরা সাংবাদিক টিপুর ওপর হামলে পড়েন। মামুন উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী রাসেলকে উত্তেজিত হয়ে বিষয়টি মোবাইল ফোনে অবহিত করেন। রাসেল সরেজমিনে উপস্থিত শ্রমিকসহ স্থানীয় লোকজনের সাক্ষ্য নিয়ে টিপুর বিরুদ্ধে রায় দেন।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মো. রাসেল অবশ্য বলছেন, ‘একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে আমার একজন কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়েছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত শ্রমিকদের সাক্ষ্য শেষে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় টিপুকে ১৭৬ ধারায় ১০ দিনের সাজা ও ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।’ সাংবাদিকদের দাবি ও আন্দোলনের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিক টিপু জামিন পেয়েছেন।
সাংবাদিকরা তথ্য পাওয়ার জন্য নানা পদ্ধতি ও কৌশল বেছে নিয়ে থাকেন। তথ্য সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মন্তব্যসহকারে তা প্রকাশ করা সাংবাদিকের কাজ। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের জন্য এসব পদ্ধতি ও কৌশলের কোনো বিকল্প নেই। অথচ পেশাগত কাজ করতে গিয়েই নির্যাতন ও মামলার শিকার হতে হয় তাঁদের।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বার্থান্বেষী মহলের হামলা-ঘেরাওয়ের হুমকি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচার মামলা ও হেনস্তার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের শাসনামলে মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৪ বছরে ৪২ ধাপ নেমেছিল বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন প্রাণহানি ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে এই অবস্থান থেকে উত্তরণের অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের ওপর এ ধরনের আঘাত নতুন বাংলাদেশের অভীষ্টের জন্য মোটেই সুখকর নয়।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়