তারিক হাসান বিপুল
রূপদিয়া রেলস্টেশন। প্রতিদিন এখানে থামে অসংখ্য ট্রেন, নামে-ওঠে শত শত যাত্রী। কিন্তু গতকাল এই ব্যস্ত প্ল্যাটফর্মের এক কোণে ছায়ার মতো পড়ে ছিলেন এক নারী—নিঃসঙ্গ, অসুস্থ এবং নিঃস্ব। কেউ চিনত না তাকে, জানত না তার নাম, ঠিকানা বা কোথা থেকে এসেছেন। তবে এতটুকু বোঝা যাচ্ছিল—তিনি ভীষণ কষ্টে আছেন। স্থানীয় মানুষের মানবিক সাড়া আসে দ্রুত। বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে খবর পেয়ে যশোর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ছুটে যায় সেখানে। স্টেশন চত্বরে পড়ে থাকা এই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর মুখে ছিল না কোনো ভাষা, শরীর বলছিল কেবল একটাই কথা—”আমি মায়ের পথে।” যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, নারীটি গর্ভবতী এবং অবিলম্বে তার প্রসব করানো দরকার। অল্প সময়েই পৃথিবীর মুখ দেখে এক নবজাতক পুত্র। জীবনের দুর্বিষহ এক মুহূর্তে এক নারীর মা হয়ে ওঠার গল্প যেন নিঃশব্দে বলে গেল—মানবিকতা হারায়নি এখনো। হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে মা ও নবজাতক এখন নিরাপদে। চিকিৎসকেরা তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। নারীর নাম—সম্ভবত নাজমা, বয়স আনুমানিক ২৬। স্বামীর নাম হিসেবে উঠে এসেছে ‘লুৎফর’। কিন্তু তাদের ঠিকানা, জীবনগাথা, স্বপ্ন কিংবা স্মৃতির কোনো ছাপ মেলেনি এখনো। এই ঘটনার পর স্থানীয়রা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আবেদন উঠেছে—এই মা ও সন্তানের ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকারে না হারিয়ে যায়। সমাজসেবামূলক সংস্থাগুলোর সহায়তা, স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ববোধ এবং আমাদের সবার সহানুভূতি এই দুজন মানুষের জীবনে নতুন আশার আলো এনে দিতে পারে। শিশুটি এসেছে এক অচেনা পৃথিবীতে—যেখানে তার কোনো ঠিকানা নেই, নেই কোনো পরিচয়। তার প্রথম আশ্রয় সেই মা, যিনি নিজেই জীবনযুদ্ধে অসহায়। এখন আমাদের প্রশ্ন একটাই—এই আশ্রয়হীন মাতৃত্বের পাশে আমরা কি দাঁড়াতে পারি না? মানবিকতা শুধু সহানুভূতির ভাষায় নয়, কাজে প্রকাশ পায়। আজ রূপদিয়ার এক কোনা থেকে সেই নিঃশব্দ ডাক শুনে নেওয়ার সময়—হয়তো এটাই আমাদের মানবিক সমাজ হবার প্রথম পদক্ষেপ।

