দেশের রাজনীতিতে প্রধান আলোচ্য বিষয় এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করে আসছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেছেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই তাঁর এই ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দাবি করেছে। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বারবার বিএনপি বলে এসেছে দ্রুত নির্বাচন চায়। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু নিঃসন্দেহে বিএনপি শুধু নয়, এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণায় গোটা জাতি হতাশ হয়েছে।’ শুক্রবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়। পাশাপাশি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন দলটির নেতারা। শুধু বিএনপি নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সরকারের আন্তরিকতা থাকলে এ সময়ের মধ্যেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা সম্ভব। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘কেন কালক্ষেপণ করে এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলছেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, এপ্রিল মাস জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয়। মার্চ মাসে রোজার মধ্যে নির্বাচনী প্রচার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। তা ছাড়া এপ্রিলে প্রচণ্ড গরম থাকবে। সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি কিংবা ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকে। এ সময় কালবৈশাখীসহ ঝড়বৃষ্টি প্রায়ই হয়ে থাকে। এ সময়টা এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা ও তার প্রস্তুতির সময়। তাই এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা একটি অবিবেচনাপ্রসূত কাজ। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কেন সম্ভব নয়, তারও কোনো ব্যাখ্যা সরকার দিচ্ছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাদের মতে, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর যে নির্বাচন হয়েছিল তা তিন মাসের মধ্যেই হয়েছিল। সে সময় যথেষ্ট সংস্কার করে নির্বাচন সুষ্ঠু করা হয়েছিল। তার পরও কয়েকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সংস্কার করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করেছিল। তাঁদের প্রশ্ন, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার কেন তা করতে পারছে না বা করছে না। নির্বাচন পেছানোর জন্য সংস্কার ও বিচারের কথা বলা হলেও গত ১০ মাসে সে লক্ষ্যে তাদের কাজের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। আর সংস্কার ও বিচার চলমান প্রক্রিয়া। এর জন্য জাতীয় নির্বাচন বন্ধ থাকতে পারে না। আমরা আশা করি, নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।
এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণায় হতাশা
Previous article
Next article
আরো দেখুন
জামিন পাননি সাবেক মেয়র আইভী
প্রতিদিনের ডেস্ক:
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে নতুন করে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো পাঁচ মামলার মধ্যে দুইটির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ...
সর্বকালের সর্বনিম্ন রুপির দাম, ভারতের জন্য বড় ধাক্কা
প্রতিদিনের ডেস্ক:
আরও কমেছে ভারতের রুপির দাম। দীর্ঘদিন ধরে ৮৮.৮০-এর গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক স্তরে থাকার পর রুপির দ্রুত পতন শুরু হয়। বর্তমানে ডলারের বিপরীতে ইতিহাসের সর্বনিম্ন...

