১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

মায়ের গর্ভে থাকা শিশু বিক্রি!

প্রতিদিনের ডেস্ক
ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ একটি আন্তর্জাতিক শিশু পাচার চক্রের সন্ধান পেয়েছে। চক্রটি ২০২৩ সাল থেকে অন্তত ২৫টি শিশু সিঙ্গাপুরে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইন্দোনেশিয়ার পন্টিয়ানাক ও টাংগেরাং শহর থেকে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পাচারের আগমুহূর্তে ছয়টি শিশু উদ্ধার করা হয়েছে। পশ্চিম জাভা পুলিশের অপরাধ তদন্ত শাখার পরিচালক সুরাওয়ান জানিয়েছেন, ‘শিশুদের প্রথমে পন্টিয়ানাকে রাখা হতো এবং তাদের ইমিগ্রেশন কাগজপত্র তৈরি করা হতো, এরপর সিঙ্গাপুরে পাঠানো হতো।’ পুলিশ আরো জানায়, এই চক্রের লক্ষ্য ছিল এমন মা বা বাবা, যারা সন্তানকে রাখতে চাইতেন না। ফেসবুকে যোগাযোগ শুরুর পর হোয়াটসঅ্যাপের মতো ব্যক্তিগত প্ল্যাটফর্মে কথাবার্তা চালানো হতো।সুরাওয়ান বলেন, ‘কিছু শিশু তো গর্ভে থাকাকালীনই বিক্রি করা হতো। জন্মের পর প্রসবের খরচ দেওয়া হতো, এরপর কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে সন্তান নিয়ে যাওয়া হতো।’ এই চক্র সন্তান বিক্রির জন্য উপযুক্ত পরিবার খুঁজতেন, আবার কিছু সদস্য শিশুদের দেখাশোনা করতেন। অনেকে ভুয়া জন্ম সনদ, পারিবারিক কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করতেন। শিশুদের মায়েদের কাছ থেকে নেওয়ার পর দুই-তিন মাস তাদের পালন করা হতো, এরপর পাঠানো হতো জাকার্তা ও পন্টিয়ানাকে। সেখানেই বানানো হতো জন্ম সনদ ও পাসপোর্ট। পুলিশ জানায়, প্রতি শিশুকে ১১ থেকে ১৬ মিলিয়ন ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়ায় (প্রায় ৬৭৩ থেকে ৯৭৮ মার্কিন ডলার) বিক্রি করা হতো। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, এই চক্রের মাধ্যমে ১২ জন ছেলে ও ১৩ জন মেয়ে শিশুকে বিক্রি করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই পশ্চিম জাভার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল। সুরাওয়ান জানান, অধিকাংশ শিশুই মা-বাবার সম্মতিতে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও কেউ কেউ পরবর্তী পর্যায়ে ‘শিশু অপহরণের’ অভিযোগ করেছেন। কারণ পাচারকারীরা তাদের টাকাটা দেয়নি। চক্রের আরো সদস্য ও সিঙ্গাপুরে থাকা ক্রেতাদের ধরতে ইন্টারপোল ও সিঙ্গাপুর পুলিশের সাহায্য চেয়েছে ইন্দোনেশিয়া।
২০২০ সালে যেখানে অবৈধ দত্তক নেওয়ার মাধ্যমে শিশু পাচারের ১১টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯-এ। ২০২৪ সালের একটি সাম্প্রতিক ঘটনায় দেখা যায়, পশ্চিম জাভার দেপোক এবং বালিতে শিশুপাচার হচ্ছিল, সেই সময়ও একাধিক শিশু উদ্ধার করা হয়েছিল। শিশুর দাম অঞ্চলভেদে ভিন্ন, জাভাতে ১১ থেকে ১৫ মিলিয়ন রুপিয়া, আর বালিতে তা ২০ থেকে ২৬ মিলিয়ন রুপিয়া পর্যন্ত ওঠে। শিশুর শারীরিক গঠনও এই মূল্যের ক্ষেত্রে বিবেচ্য ছিল।আন্তর্জাতিক এই শিশু পাচার চক্রটি শুধু ইন্দোনেশিয়ার জন্যই নয়, গোটা অঞ্চল ও মানবাধিকারের জন্য এক ভয়ানক বার্তা। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং সিঙ্গাপুরে শিশু গ্রহণকারী পরিবারগুলোর শনাক্তকরণ এখন ইন্দোনেশিয়া পুলিশের অগ্রাধিকার। একই সঙ্গে সমাজকে সতর্ক করতে হবে যেন আর কোনো মা-বাবা দারিদ্র্যের কারণে এমন ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য না হন।
সূত্র : বিবিসি

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়