প্রতিদিনের ডেস্ক:
ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হাজারো মানুষ আজ নিদারুণ দুঃস্বপ্নে বন্দি। ভিসা জটিলতা ও পাসপোর্ট ফেরত না পাওয়ার কারণে তাঁরা এখন চরম দুর্ভোগে। শরীয়তপুরের রাজমিস্ত্রি কাদির শেখ কিংবা মেহেরপুরের মামুনুর রশিদের মতো অসংখ্য মানুষ তাঁদের সব সঞ্চয়, এমনকি ঋণ করে কয়েক লাখ টাকা খরচ করেছেন ইতালির ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসার আশায়। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁরা ভিসা পাননি।এখন দুর্ভোগ তাঁদের নিত্যসঙ্গী।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালে ভিসা প্রক্রিয়া স্থগিতের পর ইতালি দূতাবাস পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও হাজারো আবেদনকারীর কাছে এখনো পাসপোর্ট ফেরত যায়নি। ভিসার কোনো নিশ্চয়তা নেই, আবার আবেদনও নিষ্পত্তি হচ্ছে না। যেসব কর্মীর চোখে ছিল স্বপ্নের ঝলকানি, আজ সেখানে কেবলই হতাশার কালো মেঘ।অনেক মানুষ জমিজমা বিক্রি করে বা বিপুল ঋণ নিয়ে ইতালিতে কাজের আশায় গিয়ে হয়েছেন সর্বস্বান্ত। ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে তাঁরা এখন বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পাসপোর্ট আটকে থাকায় অন্য কোনো দেশে যাওয়ার সুযোগও নেই। এটি কেবল আর্থিক ক্ষতি নয়, এটি স্বপ্ন, সম্মান ও ভবিষ্যৎ হারানোর এক নির্মম গল্প।
এই অচলাবস্থার জন্য সরাসরি দায়বদ্ধতা বর্তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ইতালি দূতাবাসের ওপর। ভিএফএস গ্লোবালের মতো সংস্থাগুলোর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। ‘যাচাই-বাছাই চলছে, শিগগিরই একটা সিদ্ধান্ত পাবেন’—এমন অস্পষ্ট আশ্বাসে দুই বছর পার হয়ে যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নীরবতা এই সংকটকে আরো গভীর করেছে। তারা শুধু সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় সারছে।আগামী ২৬ আগস্ট থেকে কর্মীদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে, সমস্যা সমাধানে প্রশাসনিক পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। এই সংকট নিরসনে সরকারের উচিত একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা। ইতালির সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করে একটি সুস্পষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হোক। ৫০ হাজার মানুষের এই কান্না যেন শুধু একটি সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে না থাকে। কারণ মানুষের স্বপ্নকে উপহাস করে, দুঃখকে অবহেলা করে কোনো রাষ্ট্রই টেকসই মর্যাদা অর্জন করতে পারে না।

