১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমানের হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করাসহ কোটি টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগও ভিত্তিহীন

সুন্দর সাহা
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমানের হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করার অভিযোগের কোন সত্যতা মেলেনি। এছাড়া হাইকোর্টের আদেশকে অগ্রাহ্য করে সরকারের প্রায় কোটি টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগও ভিত্তিহীন। প্রাপ্ত কাগজ-পত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। যশোর জেলার খাদ্য বিভাগের অধীনে ১০টি এলএসডি খাদ্য গুদামের মাধ্যমে জেলার সরকারী বরাদ্ধের চাল ও ধান ক্রয় এবং বিলিবন্টন করা হয়ে থাকে। এই কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকারী ভাবে শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। মেসার্স ইয়াসির এন্টারপ্রাইজের মালিক জনৈক মিজানুর রহমান খাঁন নিজেকে হ্যান্ডলিং শ্রমিকের মাধ্যমে গুদাম গুলোতে খাদ্য ওঠানো নামানোর কাজ করার যে দাবি করেছেন সেটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খাদ্য বিভাগের কোন তালিকাভূক্ত ঠিকাদারই নন। কারও স্বার্থ রক্ষার জন্য মেসার্স ইয়াসির এন্টারপ্রাইজের মালিক জনৈক মিজানুর রহমান খাঁন নিজেকে খাদ্য বিভাগকে বিতর্কিত করতে চাইছেন বলে যশোর জেলা খাদ্য কর্মকর্তাদের অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর জেলার ১০টি এলএসডিতে ২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জন্য লোটাস এন্ট্রারপ্রাইজ খুলনাকে শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। অতঃপর ঠিকাদারের কার্যকাল শেষ হওয়ার প্রাক্কালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ০৯/০২/২০২১ তারিখের ২০ নং স্মারক এবং খাদ্য অধিদপ্তরের ০৩/০৫/২০২১ তারিখের ২৩ নং স্মারকে কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হলে ঐ স্থাপনায় মাস্টার রোলের মাধ্যমে শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদারী কার্য পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করা হয় পরবর্তীতে তৎকালীন ঠিকাদার লোটাস এন্টারপ্রাইজ বাদী হয়ে মাস্টার রোলের মাধ্যমে শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদারী কার্যক্রম বন্ধের চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান এবং নতুন ঠিকাদার নিয়োগ অথবা নতুন ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তার কর্মকালের সময় বৃদ্ধির মাধ্যমে যশোর জেলার ১০টি এলএসডি’র শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিজ্ঞ সিনিয়র সদর সহকারী জজ আদালত, যশোরে ৩/১০/২০২১ তারিখে দেঃ/৯১৩/২১ নং মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ সিনিয়র সদর সহকারী জজ আদালত, যশোরে ০৩/১০/২০২১ তারিখে দায়েরকৃত দেঃ/৯১৩/২১ নং মামলাটি আদালত কতৃক না মঞ্জুর হয়েছে মর্মে অত্র দপ্তরকে ১০/০৯/২০২৪ তারিখের ৯৯ নং স্মারকে অবহিত করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের ২৬/০৯/২০২৪ তারিখের ৩৯৫ নং স্মারকে মাষ্টাররোল/দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে শ্রম ও হ্যান্ডলিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যশোর জেলার সকল ১০টি এলএলডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণদেরকে আদেশ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে লোটাস এন্টারপ্রাইজ, প্রোঃ সেলিম রেজা অত্র দপ্তরের ২৯/০৯/২০২৪ তারিখের ৪০৫ নং স্মারকের আদেশ চ্যালেঞ্চ করে ০৬/১১/২০২৪ খ্রিঃ তারিখে হাইকোর্টে ১২২৭৪ নং রীট পিটিশন দায়ের করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আইন উপদেষ্টার, কার্যালয়ের ২৮/০৫/২০২৫ তারিখের ২২৫ নং স্মারকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, যশোরকে অবহিত করেছেন সেলিম রেজা সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত ১২২৭৪/২০২৪ নং রিট পিটিশন মামলাটি ১৪-৫-২০২৫. তারিখে আদালতে নন-প্রসিকিউশন হয়েছে।
পরবর্তীতে অযাচিতভাবে সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টির জন্য অত্র দপ্তরের কোন তালিকাভূক্ত ঠিকাদার না হওয়া সত্ত্বেও জনৈক মিজানুর রহমান খাঁন মালিক মেসার্স ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন নং-৬৫১৭/২০২৫ দায়ের করেন। আদালত গত ২১.০৪.২০২৫ তারিখে শুনানি অন্তে মাস্টাররোলের ভিত্তিতে শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে ৩ (তিন) মাসের জন্য স্থিতিবস্থায় থাকার আদেশ দেন। আদালতের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে পিটিশনার গত ১৭/০৭/২০২৫ তারিখে হাইকোর্ট বিভাগে স্থগিতাদেশ মেয়াদ বর্ধিত করণের আবেদন করেন। সরকার পক্ষ হতে ডিএজি’র মাধ্যমে আদালতে জানানো হয় যে, রিট পিটিশনার মোঃ মিজানুর রহমান খাদ্য অধিদপ্তরের কোন এনলিস্টেট ঠিকাদার না বিধায় পিটিশারের আবেদন যথা স্থগিতাদেশ মেয়াদ বর্ধিত করা সমীচীন হবে না। মেয়াদ বর্ধিত করা হলে খাদ্য বিভাগ তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে ও সরকারের আর্থিক ক্ষতি হবে। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিটিশনারের আবেদন ডিলিট করে দেন। স্থগিতাদেশে বর্ণিত ২০/০৭/২০২৫ তারিখ অতিবাহিত হওয়ায় হাইকোর্ট কর্তৃক মাষ্টাররোলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে কোন স্থগিত আদেশ না থাকায় এবং দীর্ঘ ৩ মাস শ্রমিকগণ তাদের মজুরী না পাওয়ার প্রেক্ষিতে চরম ক্ষোভ দেখা দেওয়ার কারণে জেলা খাদ্র নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের ২০/০৭/২০২৫ তারিখের ১১৯৯ নং স্মারকে পুনরায় বিজ্ঞ আইন উপদেষ্টার দপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, ঢাকা, বরাবর শ্রমিকের মজুরী মাস্টাররোলের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে কিনা সে বিষয়ে মতামত চেয়ে পত্র প্রেরণ হলে, বিজ্ঞ আইন উপদেষ্টার দপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, ঢাকা, হতে ২৭/০৭/২০২৫ তারিখের ৩০১ নং স্মারকে অত্র দপ্তরকে জানান যে, খাদ্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে মাস্টাররোলের মাধ্যমে পরিশোধের নিমিত্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের দাখিলকৃত অপরিশোধিত ১০টি এলএসডির ২১/০৪/২০২৫ খ্রি. হতে ২০/০৭/২০২৫পর্যন্ত বকেয়া বিলসমূহ ইতোপূর্বে জিপি এর স্মারক নং-২৫, তারিখ ২৬/০২/২০২৫ এর মতামত অনুসারে যেভাবে পরিশোধ করা হয়েছে অনুরুপভাবে বিলটি পরিশোধ করা যেতে পারে। সে মোতাবেক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের দাখিলকৃত অপরিশোধিত ১০টি এলএসডির ২১/০৪/২০২৫ হতে ২০/০৭/২০২৫ পর্যন্ত সময়ের বকেয়া বিলসমূহ পরিশোধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে মিজানুর রহমান খাঁন, মালিক- মেসার্স ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক পুনরায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের অন্য বেঞ্চে রীট পিটিশন নং-৬৫১৭/২০২৫ নং মাললা/টি শুনানির জন্য সিরিয়াল পাইলে মাহামান্য হাইকোর্ট হতে ০৩/০৮/২০২৫ তারিখে আবারো ৩ মাসের জন্য স্থগিত আদেশ প্রদান করা হলে আদালতের আদেশ মোতাবেক অত্র দপ্তর হতে ০৩/০৮/২০২৫ তারিখের পর হতে আর কোন বিল পরিশোধ করা হয়নি। আইন উপদেষ্টার দপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, ঢাকার ১৮/০৮/২০২৫ তারিখের ৩৩১(১) স্মারকে রিট পিটিশন নং-৬৫১৭/২০২৫ এর প্রদত্ত রুল আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে সিভিল পিটিশন দায়ের করে রিট মালার স্থগিতাদেশ ভ্যাকেটকরণসহ সরকার পক্ষে প্রতিদ্বন্দিতা ও আর্জির দফাওয়ার জবাব প্রস্তুত পূর্বক মামলাটি নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনাব মোঃ কবীর ইকবাল হোসেন, বিজ্ঞ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকাকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছেএবং রিট পিটিশনের চাহিদা মোতাবেক ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর নিমিত্তে অত্র দপ্তরের ২৪/০৮/২০২৫ তারিখের ২৭৬ নং স্মারকে তুলনামূলক দর নির্ধারণের জন্য ৩(তিন) সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ২৭৭, ২৭৮ এবং ২৭৯ নং স্মারকে ঠিকাদার নিয়োগের নিমিত্ত ৩টি দপ্তরে জেলা প্রশাসক, যশোর, নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, যশোর এবং উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, যশোর প্রতিনিধি মনোয়নের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। অতএব, যেহেতু সরকারি যথাযথ বিধি-বিধানের আলোকে মাস্টাররোলের মাধ্যমে/দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে খাদ্য গুদামসমূহে শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং যেহেতু সংশ্লিষ্ট ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের প্রত্যায়নের প্রেক্ষিতে দাখিলকৃত বিলের অর্থ তাদের স্ব স্ব চলতি ব্যাংক হিসাবে প্রেরিত হয়েছে এবং হাজিরাবহি/মাস্টাররোল যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করে থাকেন সেহেতু শ্রমিকদের মজুরী আত্মসাতের সাথে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এবিষয়ে প্রকাশিত সংবাদসমূহ সম্পর্কে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, এসব সংবাদ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। মাস্টাররোলে শ্রমিকের মজুরী পরিশোধের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং বিজ্ঞ আইন উপদেষ্টা খাদ্য অধিদপ্তর, ঢাকা এবং স্থানীয় জিপির মতামতের আলোকে ঠিকাদারদের ২৫% কর্তন করে শ্রমিকদের প্রাপ্য ৭৫% মজুরী মাস্টাররোলের ভিত্তিতে পরিশোধ করা হয়েছে। শ্রমিক মজুরী আত্মসাতের বিষয়ে শ্রমিকদের কোন অভিযোগ নেই। তাছাড়া আমাকে উদ্বৃতিকরে যে বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, সেটিও অলিক ও কল্পনা প্রসূত। দৈনিক প্রতিদিনের কথা ছাড়া আর কোন পত্রিকার কেউ আমার সাথে যেখানে কথা না বলে আমাকে উদ্বৃতি করে সংবাদ প্রকাশ ভিত্তিহীন সংবাদের মত অনৈতিক।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়