প্রতিদিনের ডেস্ক:
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে ২৭ বছর তিন মাস কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতায় থাকার জন্য অভ্যুত্থানের চক্রান্ত করার দায়ে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি কারমেন লুসিয়া বলেছেন, বলসোনোরার বিরুদ্ধে ব্রাজিলের গণতন্ত্র দুর্বল করার উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ নেওয়া যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।বর্তমানে গৃহবন্দি আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি তৈরির দায়ে দেশটির ইতিহাসে প্রথম কোনও সাবেক প্রেসিডেন্টকে দণ্ড প্রদান করা হলো। তাই চরম ডানপন্থি ও জনতুষ্টিবাদী ৭০ বছর বয়সী এই নেতার বিরুদ্ধে আদালতের রায় বড় রকমের একটি ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।ব্রাজিলের সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ বিচারপতির এক প্যানেল ওই সাজার রায় দিয়েছে। তবে রায়টি সর্বসম্মত ছিল না। বুধবার বিচারপতি লুইজ ফুক্স ভিন্নমত পোষণ করে বলসোনারোকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন এবং আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অবশ্য বাকি চার বিচারপতি ভিন্ন পাঁচটি অপরাধে বলসোনারোকে দোষী সাব্যস্ত করেন—সশস্ত্র অপরাধী সংগঠনে অংশগ্রহণ, সহিংসভাবে গণতন্ত্র বিলোপের চেষ্টা, অভ্যুত্থান সংগঠিত করা এবং সরকারি সম্পত্তি ও সুরক্ষিত সাংস্কৃতিক সম্পদের ক্ষতি সাধন।বিচারপতি ফুক্সের ওই একক ভোটে আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ পেতে পারেন বলসোনারো। তার আইনজীবীরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ওই দণ্ড অর্থহীন বাড়াবাড়ি হয়েছে। শিগগিরই এর বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করা হলে মামলা পুরোপুরি নিষ্পত্তি হতে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসতে পারে। ২০২৬ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য ঘোষিত হলেও বলসোনারো বারবার বলেছেন, তিনি ওই নির্বাচনে প্রার্থী হবেন।চলতি বছর বিশ্বে একাধিক ডানপন্থি নেতার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চলতে দেখা গেছে। ফ্রান্সের মেরিন লে পেন ও ফিলিপাইনের রদ্রিগো দুতের্তের মতো আরও কয়েকজন ডানপন্থি নেতার পর তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলেন বলসোনারো।বলসোনারোর বিরুদ্ধে আদালতের অবস্থানের নিন্দা জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সাবেক ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই ওই মামলাকে ‘ডাইনি নিধনের’ সঙ্গে তুলনা করে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে বেশকিছু প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এরমধ্যে ছিল, শুল্ক বৃদ্ধি করা, প্রধান বিচারপতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি এবং উচ্চ আদালতের অধিকাংশ বিচারকের ভিসা বাতিল করা।কারাদণ্ডের বিষয়ে বৃহস্পতিবার প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, সাজার রায়ের বিষয়টি ছিল খুবই খারাপ। এটি ব্রাজিলের জন্য খুবই বাজে হলো বলে আমি মনে করি।যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ব্রাজিলের কংগ্রেসম্যান ও বলসোনারোর ছেলে এদুয়ার্দো বলসোনারো বলেন, ব্রাজিল এবং এর উচ্চ আদালতের বিচারকদের ওপর ট্রাম্প আরও নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করবেন বলে আশা করছেন তিনি।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, ব্রাজিলের আদালত অন্যায়ভাবে রায় দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই ‘ডাইনি নিধনের’ উপযুক্ত জবাব দেবে।রুবিওর বক্তব্যকে হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রেকর্ডে থাকা তথ্য প্রমাণকে অগ্রাহ্য করে ব্রাজিলের কর্তৃত্বের ওপর হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ব্রাজিলের গণতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় পায় না।দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা বলেছেন, তিনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার থোড়াই পরোয়া করেন।