নিজস্ব প্রতিবেদক
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহর যশোর। বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশাসন ও সংস্কৃতির কারণে প্রতিদিন হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে এ শহর। কিন্তু সীমিত পরিসরে গড়ে ওঠা যশোর পৌরসভা এখন পরিণত হয়েছে এক যানজট নগরীতে। সড়কে নামলেই আটকে পড়তে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রতিদিনের এ দুর্ভোগে অতিষ্ঠ শহরবাসী এখন প্রশ্ন তুলছেন—কথায় নয়, কবে বাস্তবে মিলবে স্বস্তি? মাত্র ১৪ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের যশোর পৌরসভায় বসবাস করছেন চার লক্ষাধিক মানুষ। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা, হাসপাতাল-ক্লিনিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় ভোর থেকে রাত অবধি মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। অথচ মানুষের জন্য নয়, সড়ক দখল করে নিয়েছে রিকশা, ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলার। দড়াটানা ব্রিজ, নিউ মার্কেট, মণিহার মোড়, রেলগেট, হাসপাতাল মোড়সহ প্রধান সড়কগুলোতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ শুরুর সময় সকাল ৮টা থেকে ৯টা এবং ছুটির সময় দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত যানজটের মাত্রা ভয়াবহ হয়। বিকেলের কোচিং শেষে একই চিত্র দেখা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে শিক্ষার্থীদের আনানেওয়া বাস ও ভ্যান একসঙ্গে প্রবেশ করায় অবস্থা আরও জটিল হয়। অথচ দিনে শহরে বাস-ট্রাক প্রবেশের কোনো নিয়ম নেই। শহরের ফুটপাতগুলোও এখন কার্যত অচল। কোথাও ভ্রাম্যমাণ দোকান, কোথাও আবার স্থায়ীভাবে টাইলস বসিয়ে ব্যবসা চলছে। ফলে হাঁটার জায়গা না পেয়ে মানুষকে বাধ্য হয়ে সড়কে নামতে হয়। এতে সড়কের চাপ আরও বেড়ে যায়। শহরে নেই পর্যাপ্ত সিগন্যাল বা জেব্রা ক্রসিং, ফলে সড়ক পারাপারও পরিণত হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে অনুমোদিত রয়েছে ২ হাজার ৯৯৩টি পায়েচালিত রিকশা, ৪ হাজার ৪৬৮টি ইজিবাইক ও ৩০০টি ভ্যানগাড়ি। কিন্তু বাস্তবে এ সংখ্যা বহু গুণ বেশি। পৌরসভার হিসাবে শহরে এখন ১৫ হাজারের বেশি মোটরচালিত রিকশা চলছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় প্রতিদিন নতুন রিকশা তৈরি হচ্ছে এবং গ্যারেজ থেকে মাত্র ২৫০ টাকায় দিনের জন্য ভাড়ায় চলছে এসব যান। ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শহরে স্বাভাবিক চলাচল সম্ভব হয় না। অনেক সময় যানজট এড়াতে হেঁটে কিছুটা পথ পাড়ি দিতে হয়।” ইজিবাইকচালক মোতাহার হোসেন বলেন, “গ্রাম থেকে প্রতিদিন শত শত গাড়ি শহরে ঢুকে পড়ে। লাইসেন্সধারীরা ভাড়া দিয়ে টানলেও এসব অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি রাস্তায় দাপট দেখাচ্ছে।” পৌরসভার সহকারী লাইসেন্স পরিদর্শক জানান, নতুন মোটরচালিত রিকশার নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে। তবে পুরোনোগুলোর নবায়ন কার্যক্রম চলছে। যোগাযোগ করা হলেও ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন গাড়ি শহরে ঢুকতে না দিলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে। ইতিমধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও শহরের আইল্যান্ড সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।’ বছরের পর বছর ধরে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং প্রতিদিন বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা, কমছে সড়কের চলাচলক্ষমতা। নগরবাসী তাই জানতে চাইছেন, যানজট নিরসনে কথার ফুলঝুরি নয়, কবে আসবে বাস্তব সমাধান?

