১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

মর্যাদায় পিছিয়ে শিক্ষকতা পেশা

বলা হয়, ‘শিক্ষকতা মহান পেশা’, কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষকসমাজের অবস্থান তার সত্যতা প্রমাণ করে কি? প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকদের আর্থিক ও পেশাগত মর্যাদার চিত্র অত্যন্ত হতাশাজনক। সামান্য বেতন, সীমিত ভাতা, অনিশ্চিত পদোন্নতি ও অবহেলার সংস্কৃতি শিক্ষকদের মনোবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিক্ষা যদি হয় জাতির মেরুদণ্ড, তবে সেই মেরুদণ্ডের রক্ত সঞ্চালনই এখন দুর্বল হয়ে পড়ছে।রবিবার এমন এক সময়ে বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫ পালিত হলো, যখন দেশের শিক্ষকরা সম্মানজনক বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করছেন।ইউনেসকোর এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘শিক্ষকতা পেশা : মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি’র বিপরীতে আমাদের দেশের শিক্ষকদের চিত্র বড়ই মলিন।
প্রকাশিত প্রতিবেদনটি স্পষ্ট করে, দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষকরাই আর্থিক দৈন্যের শিকার। দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় তিন লাখ সহকারী শিক্ষক এখনো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মর্যাদা পান, যাঁদের বেতন ১৩তম গ্রেডে মাত্র ১৮ হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ। এদিকে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষকরা শুধু মূল বেতন পান; পূর্ণাঙ্গ বাড়িভাড়া, চিকিৎসা বা অন্যান্য ভাতার সুযোগ নেই।
আবার লক্ষাধিক নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন, যাঁরা মাসের পর মাস কোনো বেতনই পান না। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের চিত্রও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় বেতন অর্ধেক।শিক্ষকদের এই আর্থিক অসচ্ছলতা সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতির প্রশ্ন যথার্থ : ‘শিক্ষকরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে পাঠদানে কিভাবে মনোযোগী হবেন?’ একজন শিক্ষক যখন নিজের ও পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খান, তখন তাঁর পক্ষে শ্রেণিকক্ষে শতভাগ মনোযোগ দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
ইউনেসকো ১৯৯২ সালের সনদে বলেছে, শিক্ষকতার পেশা হবে সব পেশার ঊর্ধ্বে। বাংলাদেশ সেই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যর্থ। সম্প্রতি শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব বা উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশে উন্নীত করার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ ইতিবাচক, তবে তা যথেষ্ট নয়। সরকারের উচিত শিক্ষকদের জন্য পৃথক ‘জাতীয় শিক্ষক বেতন কাঠামো’ প্রণয়ন, এমপিও প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও দ্রুত করা এবং নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধাপে ধাপে সহায়তার আওতায় আনা।শিক্ষক হেনস্তা, চাকরিচ্যুতি এবং অবহেলার অভিযোগ নিত্যদিনের ঘটনা। শিক্ষকের হাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার ভার ন্যস্ত। তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত না করলে শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। শিক্ষকদের বলা হয় জাতি গঠনের কারিগর। তাঁদের অবস্থা যদি নড়বড়ে হয়, জাতির অবস্থা ভালো হওয়ার কোনো কারণ নেই।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়