১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

বাড়ছে অর্থনৈতিক সংকট

সামনে নির্বাচন। তফসিল ঘোষণা করার জন্য সময় বাকি আছে মাত্র মাসখানেক। তাই সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তা ও কর্মকাণ্ড এখন মূলত নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের পদ্ধতি, সংবিধান সংস্কার, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, গণভোট, গত বছরের গণহত্যার বিচার, এমনই নানা বিষয়ে আলোচনা-মতভেদ তুঙ্গে। এত সব ইস্যুর আড়ালে অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে দেশের অর্থনৈতিক সংকট, ব্যবসা-বাণিজ্যের দুরবস্থা, বিনিয়োগের স্থবিরতা, গ্যাস-জ্বালানির সংকটে উৎপাদন হ্রাসের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। এরই মধ্যে কয়েক শ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়ার পথে আরো অনেক কারখানা। লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়েছেন। কর্মসংস্থান না বাড়ায় দেশে ক্রমাগত বেড়ে চলছে বেকারের সংখ্যা, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য আরেক বড় শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাবস্থা চলতে থাকায় সরকারের রাজস্ব আয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ থেকে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থবছরের তিন মাসে উচ্চ প্রবৃদ্ধির মধ্যে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বা ৯ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি পড়েছে। সংস্থাটি এখন মরিয়া হয়ে অনেকটা অসম্ভব হলেও মামলায় আটকে থাকা রাজস্ব, বকেয়া ভ্যাট-ট্যাক্স আর কর ফাঁকি থেকে রাজস্ব আদায়ে উঠেপড়ে লেগেছে। ব্যবসায়ী-অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা ও ব্যাবসায়িক পরিবেশের উন্নতি আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত অর্থনীতিতে গতি ফিরবে না।
কয়েক বছর ধরেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নানা ধরনের সংকট মোকাবেলা করছিল। আশা করা হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকারে স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদরা দায়িত্ব পাওয়ায় পরিস্থিতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থনীতি আবারও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে সক্ষম হবে। কিন্তু এই সরকারের প্রায় ১৪ মাসে রেমিট্যান্স, রিজার্ভ ও রপ্তানিতে কিছুটা ইতিবাচক ধারা ছাড়া তেমন সাফল্য নেই। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস প্রেসিডেন্ট অর্থনীতিবিদ ড. সাদিক আহমেদ বলেন, ‘বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের হারও অনেক কম। কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা, জ্বালানি খাত, ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা ও অন্যান্য বিষয় দেখেই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘এখনো বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও গ্যাসের সরবরাহে সমস্যা আছে। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ ভিয়েতনাম-ভারতের চেয়ে অনেক বেশি। এগুলোর ওপর জোর দিতে হবে।’ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেভাবে কিছুটা বেড়েছে, তাকে অনেকেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। তাঁদের মতে, দেশে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। উচ্চ সুদসহ নানা কারণে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছেন না। অনেকে কোনো রকমে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। এসব কারণে শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি কমে যাচ্ছে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বাড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে তা দেশের অর্থনীতিকে পেছনে ঠেলবে, মোট উৎপাদনশীলতা কমে যাবে। সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মূল্যস্ফীতি ভোগান্তির কারণ হবে। রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও এসবের নেতিবাচক প্রভাব ক্রমেই তীব্র হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব। অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিলে রাজস্ব আদায়ে তার একটা প্রভাব পড়ে। ব্যবসায় মন্দা থাকায় কোথাও কর আদায়ের জন্য জোরালো পদক্ষেপও নেওয়া যাচ্ছে না।’ বর্তমান বিশ্ব অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। অর্থনৈতিকভাবে কোনো দেশ একবার পিছিয়ে পড়লে তাকে টেনে তোলা অত্যন্ত কঠিন। তাই দেশে যেমন দ্রুত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে, একইভাবে দেশ যাতে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে না পড়ে, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়