১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

চৌগাছা মাঠের টপ সয়েল যাচ্ছে ভাটাই কৃষি জমি হারাচ্ছে উর্বরতা

এম এ রহিম, চৌগাছা
যশোরের চৌগাছায় কোন মতেই থামানো যাচ্ছে না জমির উপরিভাগ টপ সয়েল বিক্রি। পরিবেশ আইন অমান্য করে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। আবার মাটি ব্যবসায়ীরা কম দামে জমির উর্বর এই মাটি কিনে বিক্রি করছে বেশি দামে। ফলে কৃষি জমির উর্বরতা হারানোর পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্য। মাটি বোঝাই ট্রাক-ট্রাক্টর ও পাওয়াটিলার বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় ভেঙ্গে যাচ্ছে এলাকার রাস্তা-ঘাট। অভিযোগ রয়েছে, একদল অসাধু ব্যবসায়ী কৃষকদেরকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে এসব মাটি কিনে পাচার করছে ইটভাটা এবং ঘরের ভিট তৈরিসহ বিভিন্ন স্থানে। যদিও প্রশাসন বলছে, জমির উপরিভাগের মাটি কাটা অবৈধ। যারা অবৈধভাবে মাটি কাটবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চলমান থাকবে। জানা যায়, উপজেলার ফুলসারা, হাকিমপুর, পাতিবিলা, সিংহঝুলী, চৌগাছা সদর, পাশাপোল, ধুলিয়ানী, জগদিশপুর, নারায়নপুর, স্বরুপদাহ ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অবাধে চলছে কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন মাঠে লেগে জমিতে আছে ট্রাক-ট্রাক্টর ও পাওয়াটিলারের দীর্ঘ লাইন। ফসলি এসব জমি থেকে কুদাল ও এক্সেভেটরের মাধ্যমে মাটি কেটে সেগুলো পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক, পাওয়াটিলার ট্রলি ও ট্রাক্টরেরমাধ্যমে। আর এসব মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে বসতভিটা, শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও ইটভাটায়। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে অল্প টাকায়কিনে প্রতি ট্রাক্টর মাটি বিক্রি করেন ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। আর এতে করে অধিক মুনাফা আদায় করে নিচ্ছে চক্রটি। উপজেলা কৃষি অফিসার মোসাব্বির হুসাইন বলেন, জমির উপরিভাগের ছয় থেকে দশ ইঞ্চিতে জৈব পদার্থ বিদ্যমান থাকে। উপরিভাগ কাটার ফলে জমির ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই সেগুলো কাটা অথবা বিক্রি করা যাবে না। তবুও অসাধু চক্রের ফাঁদে পড়ে সামান্য কিছু টাকার জন্য জমির উপরিভাগের মাটি কাটার অনুমতি দিচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা। এদিকে, কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে মাঝে-মধ্যে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার তাসমিন জাহান। তবে তাদের এই অভিযান কোন কাজেই আসছে না। সকালে অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা দিলেও বিকেলেই একই জায়গা থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে মাটি। একটি চক্র রাতের আধারে কপোতাক্ষ নদ পাড়ের মাটি কেটে সাবাড় করে চলেছেন। অথবা রাতের আধারে ট্রাক-ট্রাক্টরের মাধ্যমে কৃষি জমির মাটি পাচার করা হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইট ভাটাই। এমতাবস্থায় পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে এবং এলাকার রাস্তা ঘাট রক্ষায় প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারি কামনা করেছেন এলাকাবাসী। বাংলাদেশ কৃষক ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতা মাস্টার আলী কদর বলেন, প্রতারণার ফাঁদে পড়ে জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি না করার জন্য কৃষকদের প্রতি আহবান জানান তিনি। একই সাথে তিনি মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সম্প্র্রতি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমিন জাহান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার অভিযোগে পৌর এলাকার কদমতলা গ্রামের এক ব্যক্তিকে জেল ও জরিমানা দেন। অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার ভুমি বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার বলেন, জমির উপরিভাগের মাটি কাটার খবর পাওয়া মাত্রই অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন- যারাই অবৈধ এসব কর্মকান্ড করবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্টদের জরিমানা করাহয়েছে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়