আজ থেকে ১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ঢাকার পিলখানায় সদর দপ্তরে তৎকালীন বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৮ জন সেনা সদস্যকে (৫৭ জন কর্মকর্তা এবং একজন সৈনিক) নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। হত্যা করা হয় মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের স্ত্রী নাজনীন হোসেন শাকিলকেও। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।
গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে সঠিক তদন্তের জন্য একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠিত হয়। সেই কমিশন গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান ও অন্য সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এতে উঠে আসে এই ঘটনার মূল সমন্বয়কারী ছিলেন ফজলে নূর তাপস।এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রথম সারির কয়েকজন নেতা জড়িত ছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিল। বেশ কিছু ভারতীয় ব্যক্তির জড়িত থাকার আলামত রয়েছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদও দায় এড়াতে পারেন না।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতি দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে ছিল। আপনারা সত্য উদঘাটনে যে ভূমিকা রেখেছেন, জাতি তা স্মরণে রাখবে। জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ কমিশনের প্রধান ফজলুর রহমান বলেন, ‘তদন্তকাজ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ত্রুটিমুক্ত করার স্বার্থে সর্বোচ্চ পেশাদারি বজায় রাখা হয়েছে। আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখন ১৬ বছর আগের এই ঘটনার বহু আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে।
এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকে বিদেশে চলে গেছেন। আমরা দুটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছি। সাক্ষীদের ডাকলাম, আট ঘণ্টা পর্যন্ত কারো কারো বক্তব্য শুনেছি আমরা। যতক্ষণ তাঁরা বলতে চেয়েছেন। যাঁরা তদন্তে জড়িত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের তদন্তের রিপোর্ট কালেক্ট করেছি, অন্যান্য এলিমেন্ট কালেক্ট করেছি।’ ফজলুর রহমান বলেন, এই তদন্তের মাধ্যমে বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনমনে থাকা প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে, উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে কার কী ভূমিকা ছিল। পরে রবিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘এই ঘটনায় ভারত জড়িত ছিল। ভারত চেয়েছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে দুর্বল করতে। দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে। আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব রেখেছি, এ বিষয়ে ভারতের কাছে তথ্য চাইতে।’
আমরা আশা করি, জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পিলখানায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনি প্রক্রিয়ার অধীনে আনা হবে এবং বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা হবে।

