প্রতিদিনের ডেস্ক
ছোটবেলায় চা মানেই মেজ কাকার দোকানের গরম দুধ চা। ঘুম থেকে উঠেই ঘরের সব খাবারকে তুচ্ছ করে একটি পাউরুটির সঙ্গে এককাপ গরম চা ছিল সেই সময়ের আরাধ্য বিষয়। কিংবা বিকেলে নানার পাশে বসে পিরিচে চা ঢেলে চুক চুক করে খাওয়াই ছিল আভিজাত্যের লক্ষণ। তখন চায়ের দাম ছিল দুই টাকা। পাউরুটিও এক বা দুই টাকায় পাওয়া যেত।
চায়ের কাপের টুংটাং শব্দ আজও মধুর লাগে। দুই টাকার চা এখন দশ টাকা। তবুও চায়ের প্রতি টান কিন্তু কমেনি। বাসা, অফিস, আড্ডা কোথায় নেই চায়ের কাপ? ধোঁয়া ওঠা গরম চা সবারই প্রিয়। নাটকের মহড়ার ফাঁকে আমাদের নাটকের প্রশিক্ষক আ জ ম কামাল খালুর জন্য চা আনলে তিনি রেখে দিতেন। যদি বলতাম, ‘খালু, চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি হেসে জবাব দিতেন, ‘ব্যাটা, কোল্ড টি অ্যান্ড ওল্ড ওম্যান দুটোই নিরাপদ।’ তার সেই কথার রহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারিনি।
মজার বিষয় হচ্ছে, আমি চা দ্রুত পান করতে পারি না। হয়তো কামাল খালুও পারেন না। আড্ডায় সবার কাপের চা শেষ হয়ে গেলেও আমার চা শেষ হতে চায় না। কারণ গরম চায়ে আমার ভীতি কাজ করে। গরমের ভীতি। জিহ্বা পুড়ে যাওয়ার ভীতি। এ নিয়ে অনেকে হাসাহাসিও করেন। তারপরও চা পানের ক্ষেত্রে আমি বরাবরই সচেতন।
আজ এই কথাগুলো মনে পড়ল, কারণ ১২ জানুয়ারি ‘গরম চা দিবস’। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘হট টি ডে’। আমি আবার ইংরেজিতে বলতে পারি না। বলতে গেলে আমার মুখে চলে আসে, ‘হট টি টি টি’। শুনেছি, ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালে এই কাউন্সিল ‘হট টি ডে’ বা ‘গরম চা দিবস’ প্রচলন করে।
পিরিচে ঢেলে চা পানের বয়স থেকেই শুনে এসেছি, চায়ের উৎপত্তি মূলত চীন দেশে। আবার গরম গরম চায়ের আছে ঠান্ডা একটা ইতিহাস। যা প্রায় ৫ হাজার বছর আগের। প্রচলিত আছে, এক চীনা সম্রাট গরম পানির কাপ নিয়ে একটি গাছের নিচে বসে ছিলেন। তখন কিছু শুকনা পাতা কাপের মধ্যে পড়ে। সম্রাট সেই পানীয় পান করে মুগ্ধ হয়ে যান।
এভাবেই নাকি গরম চায়ের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এই গল্পের সত্য-মিথ্যা জানতে চেয়ে বিব্রত করবেন না। তবে এ কথা সত্য যে, শত শত বছর ধরে মানুষ গরম গরম চা পান করে আসছেন। শুধু তা-ই নয়, বছরের পর বছর চা নিয়ে চলছে নানা গবেষণা।
বিভিন্ন সময়ে গরম পানির সঙ্গে লতা, গুল্ম ও পাতা মিশিয়ে পান করা হয়েছে। তবে চায়ের সবচেয়ে আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে গরম পানির সঙ্গে চা পাতার গুঁড়া মিশিয়ে পান করা। এই পাতা ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়।
এশিয়ায় গরম চা পান শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে। ষোড়শ শতাব্দীর আগে ইউরোপে চা প্রবেশ করতে পারেনি। ১৬০০-এর দশকে ইংল্যান্ডের মানুষ সুস্বাদু পানীয়টির প্রেমে পড়ে। একটি আধুনিক শ্রেণির জনপ্রিয় পানীয় হিসেবে জায়গা করে নিতে শুরু করে। ব্রিটিশ ভারতেও চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। তখন বিশ্বব্যাপী একটি শিল্প হয়ে ওঠে চা।
সে যা-ই হোক, বাংলার মিস্টার বিনখ্যাত রাসেদ শিকদারের মতো দ্রুত গরম চা পানের সহজ উপায় হচ্ছে- পানি সিদ্ধ করে তাতে চা পাতার গুঁড়া দিন। ঠান্ডা চামচ দিয়ে নাড়ুন। ওয়ান টাইম কাপে নিয়ে পান করে ফেলুন। তবে এখন কিন্তু নানা রকমের চা পাওয়া যায়। যেমন- তুলশি চা, লেবু চা, আদা চা, পুদিনা চা, কমলা চা, কালিজিরা চা, তেঁতুল চা, মরিচ চা, দুধ চা, কনডেন্সড মিল্ক চা, গুঁড়া দুধের চা ইত্যাদি।
মনে রাখবেন, গরম গরম চা দ্রুত পান করতে গিয়ে জিহ্বা পুড়ে গেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।

