প্রতিদিনের ডেস্ক:
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান—সাম্য ও মানবতার জয়গান গেয়ে অমর এই পঙক্তি লিখেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আবার তার কলম থেকেই বেরিয়ে এসেছিল বজ্রনির্ঘোষ আহ্বান— ‘জাগো অনশন-বন্দি, ওঠ রে যত জগতের বঞ্চিত ভাগ্যহত’ ও ‘বল বীর- বল উন্নত মম শির!’ তার কবিতায় ছিল দ্রোহ, প্রেম ও মানবতা।শুধু কি কবিতায়? না, গানে, উপন্যাসে, গল্পে সর্বত্রই মানবমুক্তি প্রেমময় বাণী ও দ্রোহের বাণী তার। সামাজিক বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা, কুসংস্কার, হীনম্মন্যতার বিরুদ্ধেও লিখেছেন অনবরত, যা বাংলা সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ। আর তাইতো বাংলা সাহিত্যে তাকে দেওয়া হয়েছে জাতীয় কবির সম্মান। দ্রোহ, প্রেম ও মানবতার এই কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৫ মে ১৮৯৯) অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মহান এই কবি। চরম দারিদ্র্য অতিক্রম করে হয়ে ওঠেন বাংলা সাহিত্যের কান্ডারি।নজরুলের ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নজরুলের কবিতা ও গান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কবি নজরুল তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছেন। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনো প্রাসঙ্গিক।প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘কবি নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতার সংগ্রাম ও কর্মে।’শেখ হাসিনা বলেন, কবি নজরুলের লেখনীতে ফুটে ওঠে আর্ত-পীড়িত, ব্যথিত ও উপেক্ষিত মানব মনের কথা। কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তিনি অন্যায়, অসত্য, নির্যাতন-নিপীড়ন, নানামাত্রিক অসাম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে যুগে যুগে মানুষকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে উচ্চকণ্ঠ হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছেন। তার কাছে ধর্ম, গোত্র, জাত-কুল, ধনি-গরিব সব শ্রেণির মানুষ ছিল সমান।

