বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) টেলিফোন গ্রাহক সংখ্যা গত এক বছরে কমেছে ৪০ হাজার। বর্তমানে রাজধানীতে বিটিসিএলের সংযোগ দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে ১৫ লাখ গ্রাহককে। বিটিসিএল সেবা দিচ্ছে তিন ভাগের এক ভাগ গ্রাহককে। এক সময় আভিজাত্যের নিদর্শন ছিল ল্যান্ডফোন। সেই জনপ্রিয়তা এখন প্রায় তলানিতে। টেলিফোন আর আগের মতো নেই। কোনো সমস্যা হলে সহজে সার্ভিসিং করতে লোকও পাওয়া যায় না। যদিও বিটিসিএল নিচ্ছে ন্যূনতম কলচার্জ, রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধা। তবে সেবার মান নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। যতই কম ব্যবহার করা হোক দিতে হয় মাসিক লাইন রেন্ট। বিটিসিএলের গ্রাহক কমার এটাও একটা অন্যতম কারণ। মানুষ এখন মোবাইল ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্য পায় বেশি। মুহূর্তেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে কথা বলা যায় সরাসরি মুখদর্শন করে, যেটাকে আমরা ভিডিও কল বলি।
টেলিফোন সেবায় বৈচিত্র্য আনতে ‘আলাপ’ নামে আইপি কলিং অ্যাপ চালু করেছে বিটিসিএল। এর মাধ্যমে ফ্রি অননেট কল, এইচডি ভিডিও কল, সাশ্রয়ী অফনেট কল, ভিডিও কনফারেন্সসহ আকর্ষণীয় নানা ফিচার দিয়েও বাড়াতে পারছে না গ্রাহক। নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, টানা ১৫ বছর লোকসানে ছিল বিটিসিএল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে লাভ হয়েছে ১৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। বর্তমানে গ্রাহকদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির মন্দ পাওনার পরিমাণ ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এগুলো আদায় নিয়েও রয়েছে সংশয়। বর্তমানে বিটিসিএলের কাছে আয়ের অংশ এবং বিভিন্ন ফি বাবদ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা পায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। অন্যদিকে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে লোকসানে পড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে সহজে বিনিয়োগ করতে চায় না সরকারও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ল্যান্ডফোনের সেবার মান বাড়াতে বলেছেন।
বেসরকারি ইন্টারনেট সেবা গ্রাহকদের মতানুযায়ী, বিটিসিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চেয়ে বেসরকারি অপারেটরদের ব্যবহার ভালো। বিটিসিএলের ইন্টারনেট সংযোগ পেতে আবেদন করাসহ নানা প্রক্রিয়া অনুসরণের পরও গ্রাহকদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। বেসরকারি অপারেটররা একদিনেই সংযোগ দেয়। তুলনামূলক সস্তাও। এসব কারণে বেসরকারি ইন্টারনেটের দিকে ঝুঁকছে বেশিরভাগ গ্রাহক। অন্যদিকে বিটিসিএলের সাপোর্ট সার্ভিস দেওয়ার মতো যথেষ্ট লোকবলও নেই। প্রায়ই টেলিফোনের লাইনও থাকে অচল। গ্রাহকরা নানা অভিযোগ দিলেও তা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে না। বিটিসিএলের আরেকটি প্রতিষ্ঠান টেলিটক ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে ব্যাপক সাড়া ফেলে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের তথ্যানুযায়ী, টেলিটকও গত ২০ বছরে লোকসান গুনেছে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০০২ সালের আগে বিটিসিএল এককভাবে বৈদেশিক কলসেবার খাত আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) সেবা দিত। ওই বছর (বিটিআরসি) যাত্রা শুরুর পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও আইজিডব্লিউ সেবার লাইসেন্স দেওয়া হয়। বর্তমানে বিটিসিএল ছাড়াও ২৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিচ্ছে। তাই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকতে হলে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের সেবার মান বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।

