১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

বেনাপোলে ঘোষনা বহির্ভুত ১৮ কোটি টাকার সালফিউরিক এসিড জব্দ : মামলা করেনি কাষ্টমস!

সুন্দর সাহা
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে বেনাপোল কাস্টমস মিথ্যা ঘোষণার ফরমিক এসিডের ঘোষনা দিয়ে ১৮ কোটি টাকা মূল্যের সালফিউরিক এসিডের একটি চালান জব্দ করেছে। ঘোষনা বহির্ভুত পণ্য চালানে ১৫ টন ৭৫০ কেজি সালফিউরিক এসিড রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এধরণের যত অপকর্ম সবই হয় ২ নম্বর গ্রুপের সুপার আরিফুল ইসলামের সহায়তায়। আর এ কারণে ১১ লাখ টাকার ঘোষণা দিয়ে ১৮ কোটি টাকার ঘোষনা বহির্ভুত ১৫ টন ৭৫০ কেজি সালফিউরিক এসিড ছাড়িয়ে নেয়ার প্রাক্কালে এনএসআই-এর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার পন্য চালানটি জব্দ করা হয়। যার বিল অব এন্ট্রি নম্বর সি-৫৫৯০৪। পণ্যটির ইনভয়েজ মূল্য ৯ হাজার ৬০৭.৫ মার্কিন ডলার। যা বাংলা টাকায় হবে ১১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। কাস্টমস ডিউটি সহ পণ্যচালানটির মূল্য প্রায় ২১ লাখ টাকা বলে কাস্টমস সূত্র জানায়। পন্য চালানটি ভারত থেকে আমদানী করেছেন চট্রগ্রামস্থ রিফ লেদার লিমিটেড নামে একটি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান। রফতানীকারক প্রতিষ্ঠান হলো ভারতের কেরেলাস্থ ক্যাটালাইস কেমিক্যাল ইন্ডাট্রিজ। পন্য চালানটি বন্দর থেকে খালাশ করনের দায়িত্বে ছিল মোশাররফ টেডার্স নামে এক সিএন্ডএফ এজেন্ট। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্রগ্রামস্থ রিফ লেদার লিমিটেড নামে একটি আমদানী কারক প্রতিষ্ঠান গত ২ জুলাই ফরমিক এসিড নাম ঘোষনা দিয়ে ১৫.৭৫ মেট্রিক টন সালফিউরিক এসিড আমদানী করেন। পন্য চালানটি বন্দরের ৩৮ সেডে রাখা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এর তথ্যের ভিত্তিতে পন্য চালানটি কায়িক পরীক্ষাকালে নমুনা সংগ্রহ করে ক্যামিকেল পরিক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। ল্যাব টেষ্টে ফরমিক এসিডের পরিবর্তে সালফিউরিক এসিড পাওয়া যায়। আর সালফিউরিক এসিড আমদানী করতে হলে এলসি খোলার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া সালফিউরিক এসিড আমদানী করা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। এ পন্য চালানে মোটা অংকের শুল্ক ফাকির ঘটনা ঘটতো। ফরমিক এসিডের মোট শুল্কহার ৩৭% এবং সালফিউরিক এসিডের শুল্কহার ৭৮%। ঘোষনা বহির্ভুত পন্য আমদানী ও শুল্ক ফাকির প্রবনতা থাকায় পন্য চালানটি সাময়িক আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সিএন্ডএফ এজেন্ট মোশাররফ টেডার্সের স্বত্তাধিকারী মোশাররফ হোসেন মিডিয়াকে জানান, ‘আমার আমদানীকারক ফরমিক এসিড আমদানী করেছেন। পন্য চালানটি বেনাপোলে বন্দরে প্রবেশ করার পরে কাস্টমস সেটা ল্যাবে পরীক্ষা করে ফরমিক এসিডের পরিবর্তে সালফিউরিক এসিড পেয়েছেন। এখানে আমার কোন ভুল নেই। ভুল করেছেন আমদানীকারক। এর সকল দায়ভার আমদানীকারকের। আমদানীকারক কি আমদানী করছেন সেটা তিনিই ভালো জানেন। আমরা মাল ছাড় করনের জন্য কাজ করে থাকি। আমদানী করা পন্যের ভিতর কি আছে, কি না আছে সেটা পন্যটি পরীক্ষার পরে বুঝতে পারি। তবে আমার আমদানিকারক এই পণ্য চালানটি পুনরায় ল্যাব টেস্টের জন্য বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বরাবর আবেদন করেছেন।’
সিএন্ডএফ এজেন্ট মোশাররফ টেডার্সের স্বত্তাধিকারী মোশাররফ হোসেনের এই বক্তব্য থেকেউ প্রতীয়মান হয় ডাল মে কুচ কালা হায়। নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি প্রমান করেছেন এটি ফরমিক এসিড এটি সালফিউরিক এসিড। অভিযোগ রয়েছে, বেনাপোল কাস্টমসের ২ নম্বর গ্রুপের সুপার আরিফুল ইসলাম নাকি বেজায় ক্ষমতাধর। টাকা হলে তিনি সব করতে পারেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে তার এসব অপকর্মের অন্যতম দোসর হচ্ছে জনৈক হারুণ। কাস্টমসের পরিভাষায় এদের বলা হয় এনজিও। বেসরকারী পর্যায়ের এই ব্যক্তিটি হচ্ছে নাটের গুরু। কোন ফাইল কত দিতে হবে, কোন ফাইল কবে ছাড়া হবে এসব নিয়ন্ত্রণ কর্তা হচ্ছে এই হারুণ। এরই পরিচালনায় সুপার আরিফুল ইসলাম আমদানিকৃত পণ্য ছাড় করানোর ফাইল বিভিন্ন জায়গায় রাখেন। তারপর তার চাহিদা মোতাবেক টাকা দিলে ফাইলে স্বাক্ষর করেন তিনি। টাকা দিলে এই কর্তা ফরমিক এসিড নাম ঘোষনা দিয়ে সালফিউরিক এসিড আমদানি করলেও তার কিছু যায় আসে না। এ বিষটি আগে থেকেই সুপার (রাজস্ব কর্মকর্তা) আরিফুল ইসলাম জানতেন। তার সাথে বড় রকমের চুক্তিতে এই পণ্য চালান আমদানি কনা হয় বলে বন্দর জুড়ে গুঞ্জন উঠেছে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে আটক বেনাপোল কাস্টমস মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা সালফিউরিক এসিড আমদানি করার বিষয়টিও আরিফুল ইসলামসহ উর্দ্ধতন কর্তাদের নলেজে ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তার সাথে রফা করে ফরমিক এসিডে ঘোষনা দিয়ে সালফিউরিক এসিড আমদানি করেছে আমদানিকারক। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) বিষয়টির তথ্য না দিলে কমিশনার আব্দুল হাকিম, জয়েন্ট কমিশনার সাফায়েত এবং রাজস্ব কর্মকর্তা বিশেষ ব্যবস্থায় পণ্য চালানটি ছেড়ে দিতেন। এ বিষয়ে স্ববিস্তার জানার জন্য তার মুঠো ফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি। এ বিষয়ে এই গ্রপের প্রধান কর্তা বহু অপকর্মের হোতা বেনাপোল কাস্টমস হাউজের জয়েন্ট কমিশনার সাফায়াত হোসেনের মুঠো ফোনে কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাকে ক্ষুদে বার্তা দিলেও কোন উত্তর দেননি। একইভাবে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের বহুল আলোচিত কমিশনার আব্দুল হাকিমের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাকেও ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও অদৃশ্য কারণে দেননি কোন উত্তর। তবে, বেনাপোল কাস্টমস হাউজের বিতর্কিত এবং আলোচিত কাস্টমস হাউজের কমিশনার আব্দুল হাকিম মিডিয়াকে জানান, আমদানিকৃত কোন পণ্যে অনিয়ম পেলে সেটা তো আটক করতেই হবে। চট্টগ্রামের রিফ লেদার লিমিটেড নামে এক আমদানিকারক ফর্মিক এসিড ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করেন। পণ্যটি বেনাপোল বন্দরে আসার পর ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। ল্যাব পরীক্ষা রিপোর্টে ফরমিক এসিডের স্থলে সালফিউরিক এসিড পাওয়া গেছে। সালফিউরিক এসিড আমদানি করতে হলে এল সি খোলার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হয়। কোন অনুমোদন তিনি নেননি আমদানি করার পূর্বে। এটা একটা বড় ধরনের অপরাধ। বর্তমান বেনাপোল কাস্টমস হাউসে অনিয়মে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ অনিয়ম করলে কোন ছাড় দেয়া হয় না বেনাপোল কাস্টমস হাউসে। এ পন্য চালানোর ক্ষেত্রেও কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে তার পোষ্যদের জানিয়েছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, মিথ্যা ঘোষণার ফরমিক এসিডের ঘোষনা দিয়ে ১৮ কোটি টাকা মূল্যের যে ১৫ টন ৭৫০ কেজি সালফিউরিক এসিড আমদানি করা হয়েছে সেটি এই কাস্টমস কমিশনার আব্দুল হাকিমের মাধ্যমে রিপোর্ট আসবে ফরমিক এসিডের। অবশ্য তার জন্য কয়েককোটি টাকা হাত বদল হবে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ, এ ধরণের ঘটনায় কাস্টমসের নিয়ম অনুযায়ী থানায় মামলা দেয়ার কথা। আলোচিত কাস্টমস হাউজের কমিশনার আব্দুল হাকিম সিটি করেননি। সেটি না করে বিশেষ ব্যবস্থায় আমদানিকারকেকে দিয়ে পুনঃ পরীক্ষার আবেদন নিয়ে দায় সেরেছেন।

 

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়