আইনের ঊর্ধ্বে কেউই নয়

0
45

শ্রম আইন লঙ্ঘনের দুটি ধারায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার শ্রম আদালত। এ ছাড়া এ মামলার অপর তিনজনকেও একই সাজা দেন আদালত। তাদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় গত সোমবার রায় দিয়েছেন ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক। এই রায়ের দ্বারা এটি প্রমাণিত হলো যে, ‘আইনের ঊর্ধ্বে কেউই নয়’। কেউ যেন জবাবদিহিতা বা আইনের শাসনের বাইরে না যায়, তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তাই ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন, কর ফাঁকি, মানি লন্ডারিং এবং অন্য সব ধরনের অপরাধের নজরদারি আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ হওয়া উচিত বলে মনে করছি। জানা গেছে, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে। গত ৬ জুন এই মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূস ও অন্যরা। আপিল বিভাগ গত ২০ আগস্ট সেই আবেদন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেন। এরপর ২২ আগস্ট শ্রম আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। এতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চারজন কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। মামলায় অভিযোগ আনা হয়- শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি দেয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেয়া হয় না। মামলায় আরো অভিযোগ আনা হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেয়া হয় না। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হয়ে থাকে এবং বলা হচ্ছে, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এই মামলা সরকার করেছে। তবে সত্য হলো, এই মামলা সরকার করেনি, করেছে তারই শ্রমিকরা। ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশের সামরিক-সমর্থিত শাসনামলে ইউনূস প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা পালন করেছিলেন। গণতন্ত্রের বিপক্ষে ইউনূসের ভূমিকা জনপরিসরে তার ভাবমূর্তিকে অনেকটাই কলঙ্কিত করে। ইউনূসের মাধ্যমে কারো অধিকার ক্ষুণ্ন হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির আইনের আশ্রয় নেয়ার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। শ্রমিকদের মামলা করার আগেই তাদের পাওনা দিয়ে দিলে এভাবে বিচারালয়ে তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে আসামি হতে হতো না। তার আমলে গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ আদায়ে কি সার্টিফিকেট মামলা করেনি, মামলায় কি গরিব-নিঃস্ব ঋণগ্রহীতার কোমরে পুলিশ দড়ি বাঁধেনি? তাহলে ড. ইউনূস কেন আইনের বাইরে থাকবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here