১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ভোটকেন্দ্র ঘিরে কড়া নিরাপত্তা, বাইরে পাহারায় নৌকা সমর্থকরা

প্রতিদিনের ডেস্ক
ভোটগ্রহণ শুরুর বাকি মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এরই মধ্যে ভোটকেন্দ্রে এসেছে নির্বাচনী বিভিন্ন সামগ্রী। ব্যালট পেপারসহ কিছু সামগ্রী আসবে রোববার (৭ জানুয়ারি) সকালে। তবুও শনিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল থেকে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশে কড়াকড়ি। বহিরাগতদের ফটকের কাছেই যেতে দিচ্ছেন না পুলিশ-আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে কয়েকশ গজ দূরে অবস্থান নিয়ে গল্পে-আড্ডায় সময় পার করছেন নৌকার সমর্থকরা।
শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বাড্ডা এলাকার কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ এলাকাটি ঢাকা-১১ আসনের মধ্যে পড়েছে। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট আটজন প্রার্থী।
তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ ওয়াকিল উদ্দিন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে শামীম আহমেদ, এনপিপির আম প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রহমান, বিএনএমের নোঙ্গর প্রতীকে হোসেন আহমেদ আশিক, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকে মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, বিএনএফেরে টেলিভিশন প্রতীকে সাদিকুন নাহার খান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির একতারা প্রতীকে ফারাহনাজ হক চৌধুরী, গণফ্রন্টের মাছ প্রতীকে শেখ মোস্তাফিজুর রহমান।
এদিকে ভোটকেন্দ্রগুলোর আশপাশে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বুথ দেখা গেছে। সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা গল্পে-আড্ডায় সময় পার করছেন। তাদের বেশ খোশ মেজাজে দেখা গেছে। তবে অন্য কোনো প্রার্থীর বুথ বা সমর্থকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কেন্দ্রের সামনে নৌকার পোস্টারের মাঝে লাঙ্গল ও নোঙর প্রতীকের পোস্টারও ঝুলতে দেখা গেছে। অন্য পাঁচ প্রার্থীর পোস্টার চোখে পড়েনি।
বাড্ডা আলাতুন্নেছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকশ গজ দূরে নৌকার অস্থায়ী বুথ বসানো হয়েছে। সেখানে কয়েকশ নেতাকর্মীরা অবস্থান করতে দেখা যায়। বুথে আড্ডা দেওয়াদের মধ্যে একজন আশিকুল হাসান। তিনি নিজেকে স্থানীয় যুবলীগ নেতা বলে দাবি করেন। এ কেন্দ্রের পরিবেশ কেমন দেখছেন, এমন প্রশ্নে আশিকুল বলেন, পরিবেশ কেমন দেখব! সবই তো ভালো। এখানে সব নৌকার লোক। আমাদের প্রার্থী বয়স্ক একজন মানুষ। তিনি সবার কাছে শ্রদ্ধেয়। তার বাইরে কেউ ভোট দেবে বলে মনে হয় না।
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সদস্য পরিচয় দিয়ে সিরাজুল ইসলাম নামে একজন বলেন, এ এলাকায় কোনো ঝামেলা নাই। আমরা সুষ্ঠু ভোটের জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা যাতে ঝামেলা করার সুযোগ না পায়, সেজন্য আমরা সতর্ক পাহারা বসিয়েছি।
ভোটকেন্দ্র ঘিরে কড়া নিরাপত্তা, বাইরে পাহারায় নৌকা সমর্থকরা
বাড্ডা আলাতুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বরত দুজন কর্মকর্তার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা নাম-পরিচয় না জানিয়ে জানান, এ স্কুলের দুটি শাখা। বালক শাখার ভবনে তিনটি এবং বালিকা শাখার ভবনে তিনটিসহ মোট ছয়টি কেন্দ্র। বালক অংশে ভোট দেবেন পুরুষরা। বালিকা অংশের ভবনের কক্ষগুলোতে ভোট দেবেন নারীরা। সব মিলিয়ে এ স্কুলে ভোটার প্রায় ১৭ হাজার।
এদিকে আলাতুন্নেছা স্কুলের ভোটকেন্দ্রে ভোটের আগের দিন দুপুর থেকে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান ফটকে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য ও প্রহরী। আবু বকর নামে একজন প্রহরী বলেন, আজকে দুপুরে অনেক জিনিসপত্র আসছে। তখন থেকেই কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া হলে তিনি কিছুটা বিনয়ের সঙ্গে বলেন, সংবাদকর্মীদেরও আজ ঢুকতে নিষেধ করেছেন স্যার। কাল ভোটের সময় আসেন, ঢুকতে দেবে।বাড্ডা হাই স্কুল, বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহানগর মহাবিদ্যালয়, উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে। এসব কেন্দ্রের বাইরে কিছু দূরে নৌকার সমর্থকরা বুথ বসিয়েছেন। সেখানে তাদের শক্ত অবস্থানও দেখা গেছে। তবে অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের খোঁজ মেলেনি এসব কেন্দ্রেও।
বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটের দায়িত্বে থাকা একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক বলেন, ব্যালট এখনো আসেনি। রাতে ব্যালট আসবেও না। সকালে ব্যালট আসবে কেন্দ্রে। তবে কেন্দ্র ও আশপাশে কাউকে জটলা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
লাঙ্গল-নোঙ্গরের পোলিং এজেন্ট নৌকা সমর্থকরা!
এদিকে ঢাকা-১১ আসনের নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ ওয়াকিল উদ্দিনের সমর্থকরাই প্রতিটি কেন্দ্রে লাঙ্গল ও নোঙ্গর প্রতীকের পোলিং এজেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন বলে জানিয়েছেন নৌকার সমর্থকরাই।
নৌকার সমর্থক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। নৌকার প্রার্থী ওয়াকিল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তবে তিনি এর আগে নির্বাচনে সেভাবে অংশ নেননি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এ আসনে এ কে এম রহমতুল্লাহ নৌকার প্রার্থী হিসেবে এমপি হয়েছেন। তাকে ‘এমপি বানানোর’ নেপথ্যে ছিলেন ওয়াকিল উদ্দিন। এবার শেষ বয়সে তিনি দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে নৌকা চান। এজন্য তিনি নৌকা পেয়েছেন। অন্য প্রার্থীরা যারা এখানে আছেন, তাদের কোনো অবস্থান নেই।
নৌকার সমর্থক ও যুবলীগের দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখাতে হলে তো কেন্দ্রে এজেন্ট রাখতে হবে। তবে এখানে ওয়াকিল উদ্দিন ছাড়া যার প্রার্থী তাদের খরচা করার মতো নেই। এজন্য ওয়াকিল উদ্দিনের লোকরাই লাঙ্গল ও নোঙ্গর প্রতীকের পোলিং এজেন্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দীর্ঘদিন আলাতুন্নেছা স্কুলের পাশে বসবাস করেন আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল। তার বয়স এখন ৮১ বছর। আলাতুন্নেছা স্কুল কেন্দ্রের ভোটার তিনি। জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওয়াকিল উদ্দিন শেষ বয়সে যখন দাঁড়াইছে, তারেই ভোটটা দেবো। সে তো রহমতুল্লাহর ওস্তাদ। রহমতুল্লাহকে দুবার এমপি বানাইছে, এবার নিজে শখ করে দাঁড়াইছে। তার পাশে আমরা থাকবো।
সবজি বিক্রেতা হাসান শেখ বলেন, ওয়াকিল উদ্দিন ছাড়া অন্য প্রার্থীকে এ এলাকার মানুষ চেনেই না। ভোট-তো দূরের কথা। নৌকা থেকে যে দাঁড়িয়েছে, তিনিই জিতবেন। বিকল্প কোনো কথা নেই।এ বিষয়ে জানতে নৌকার প্রার্থী ওয়াকিল উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলে আতিকুর রহমান নামে একজন ফোন রিসিভ করেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াকিল সাহেব ব্যস্ত আছেন, আমাকে বলুন।’প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্ট দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা মিথ্যা কথা। যারা বলেছেন, তারা অতি উৎসাহী। এগুলো কথায় কান দেবেন না।’
এ নিয়ে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শামীম আহমেদকে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভি করেননি। আর বিএনএমের নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী হোসেন আহমেদ আশিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা-১১ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৫ জন। ভোটার বেশি পুরুষ। এ আসনে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৭ হাজার ২২১ এবং নারী ২ লাখ ৯ হাজার ৩৩১ জন। এছাড়া তিনজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২১, ২২, ২৩, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা নিয়ে এ আসনটি গঠিত।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়