নির্বাচনোত্তর সহিংসতা : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

0
33

বলা যায়, মোটা দাগে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। ভোটে নির্বাচিত নতুন এমপিরা শপথগ্রহণ করেছেন গতকাল। আজ নতুন মন্ত্রীরা শপথ নিতে পারেন। আমরা সব সংসদ সদস্যকে অভিনন্দন জানাই। নির্বাচনী মাঠে বিএনপি না থাকায় আশা করা হয়েছিল নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা একই গোত্রের, এতে করে নির্বাচনী সহিংসতা এড়ানো যাবে। কিন্তু এর উল্টো চিত্র আমরা দেখছি। দিন দিন নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহতের সংখ্যা শতাধিক। এ ছাড়া যশোর-১ শার্শা-বেনাপোল আসনে চলছে শেখ আফিল উদ্দিন বাহিনীর তাণ্ডব। মহিলারাও তাদের হাত থেকে রেহায় পএচ্ছন না। এসব নিয়ে একের পর শার্শা এবং বেনাপোল পোর্ট থানায় অভেযোগ করা হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। অদৃশ্য কারনে পুলিশ নিরব-নির্বিকার। বিভিন্ন স্থানে হামলা-মামলার খবরও আসছে। নির্বাচনের আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা হয়েছে। সহিংসতার শিকার অধিকাংশই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক। পক্ষে-বিপক্ষে ভোট চাওয়া ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী অফিসে আগুন, বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, সমর্থককে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন জায়গায়। নির্বাচনের পর এমন সহিংসতা স্বভাবতই উদ্বেগজনক। এ ধরনের সহিংসতা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করে। গতকাল গণমাধ্যমে মাদারীপুরের সহিংসতার খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ হয়েছে। মাদারীপুর-৩ আসনে (কালকিনি-ডাসার-সদর একাংশ) নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় জয় ও পরাজয় দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের তিন শতাধিক ঘর-বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত দুই দিনে ২০ থেকে ২৫টি গ্রামে এই তাণ্ডব চালানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় কমপক্ষে আহত হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো। গত রবিবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কালকিনির কয়ারিয়া, ফাসিয়াতলা, আলীনগর, কালীগঞ্জ, নয়াকান্দি, ডাসারের শশীকর, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটকচর, কেন্দুয়াসহ ২০-২৫টি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মোসা. তাহমিনা বেগম ও পরাজিত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের কর্মী-সমর্থকের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। বলাবাহুল্য, নির্বাচনোত্তর সহিংসতা নতুন নয়। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ব্যাপক সহিংসতার কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছিল। কিন্তু সেসব ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি, বরং রাজনৈতিক দলগুলো এ ধরনের সহিংসতার কারণ রাজনৈতিক নয় বলে প্রচার করেছে। তারা একে সামাজিক, গোষ্ঠীগত এবং পরস্পর সম্পর্কোচ্ছেদের কারণ হিসেবে অভিহিত করেছে। দুঃখজনক বাস্ততা হলো, আমাদের দেশের নির্বাচনগুলো শতভাগ সহিংসতামুক্ত হতে পারছে না। ফলে নির্বাচনী সহিংসতা রোধে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত করতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কঠোর হতে হবে। এবার নির্বাচনের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকায় বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এখন নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতাকে ঘিরে যেন আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন না হয়, সেদিকে সবার লক্ষ রাখা উচিত। তাই দেশের জনসাধারণের জানমাল নিরাপত্তার স্বার্থে নতুন সরকার নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার লাগাম টানতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে- এটাই কাম্য।